বাবুল নাকি ধর্মনিরপেক্ষতা? বড় পরীক্ষা বালিগঞ্জবাসীর

আসিফ রেজা আনসারী

সদ্য সমাপ্ত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। প্রত্যাশামতো (নিন্দুকরা বলেন, মেশিনারির সুনিপুন প্রয়োগ) নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তবে পাঞ্জাবে পালাবদল ঘটেছে। সেখানে জাতীয় কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে ক্ষমতায় এসেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। অন্যদিকে বিরোধী শক্তিগুলো বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডে মানুষের মন ছুঁতে পারেনি। প্রচারে কিংবা ময়দানে যেভাবে প্রবল জনসমর্থন কিংবা মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছিল ইভিএম মেশিনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। যদিও সমাজবাদী পার্টি কিংবা বিরোধীদের অভিযোগ, ইভিএমে জল ঢালা হয়েছে। আর যাই হোক না কেন, সেখানে ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি।
আর এই বিজেপির ক্ষমতায় আসায়, বিষয়টিকে একশ্রেণির মানুষ উল্লাসের চোখে দেখছেন কেউ কেউ বলছেন মুসলমানদেরকে জব্দ করতে হিন্দু ভোট বিজেপি পক্ষে গিয়েছে। সচেতন মানুষ নিজেদের সঠিক দায়িত্ব পালন করেননি, এমনটাও বলছেন কেউ কেউ। আর যাই হোক না কেন বর্তমান সময়ে বেশকিছু ইস্যু সামান্য কিছু কারণের জন্য চাপা পড়ে যাচ্ছে, এ কথা বলার অবকাশ আছে।

তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বাবুল। ছবি- ফেসবুক

কেননা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিগত নির্বাচনে শাসকদলের একচ্ছত্র প্রভাব দেখা দিয়েছে, বিরোধীদল সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি কিংবা ভোট করতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সে প্রসঙ্গ থাক, তার বাইরে গিয়ে যে কথা বলতে হবে- অনেকেই মনে করছেন উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় এনে মানুষ বড় ভুল করেছে। কারণ তাদের দাবি- বিজেপি প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক দল ইত্যাদি ইত্যাদি। যদি তাই হয় তাহলে এবার বড় পরীক্ষার মুখোমুখি কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভার মানুষ।
প্রসঙ্গত, এখানে প্রার্থী হয়েছেন আসানসোলের দাঙ্গার ইন্ধনদাতা (তৃণমূলের ছোট, বড় ও মাঝারি নেতারাও একথা বলতেন) সুপ্রিয় বড়াল ওরফে গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। বালিগঞ্জ বিধানসভার মানুষ প্রকৃত অর্থেই গণতন্ত্রপ্রিয়, দেশের বহুত্ববাদ, মিশ্রসংস্কৃতি ও সম্প্রীতির পক্ষে কিনা তাদের এবার পরীক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। এ পরীক্ষায় তারা পাশ করবেন কিনা তাতে অবশ্য প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। তার বাইরে গিয়ে যে কথা বলতেই হবে_ বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে সম্প্রতি তৃণমূলের এসেছেন। তার নামে যে বড় অভিযোগ, তিনি আসানসোল দাঙ্গায় ইন্দন দিয়েছিলেন।

মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে বাবুল-উবাচ

তিনি মুসলমানদেরকে রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি ও বস্তিবাসী ইত্যাদি নামে দেগেছেন এবং মনে প্রাণে তাই-ই বিশ্বাস করেন। অন্তত তিনি সেটা দাবি করেছেন বহুবার।
আসানসোলের ইমাম রশিদীর ছেলে খুন হয়েছিলেন তাতে বাবুল সুপ্রিয়র কোনও আক্ষেপ ছিল না বরং তিনি চামড়া গুটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। এনআরসি, সিএএ ও এনপিআর ইত্যাদির পক্ষে বাবুল সুপ্রিয় পার্লামেন্টে ভোট দিয়েছেন। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত একটি দেওয়ানী বিষয়কে ফৌজদারি মামলায় রূপান্তরিত করার চক্রান্ত হিসেবে, সোজা কথায় মুসলিম যুবকদের শায়েস্তা করতে যে তিন তালাক বিরোধী আইন এসেছে, তাকে সমর্থন করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। অর্থাৎ লঘু অপরাধে গুরুদন্ড দেওয়ার যে আইন তাকে সমর্থন করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। জনবিরোধী কৃষি আইন, শ্রম কোড ইত্যাদির সমর্থক বাবুল। ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

যে দল গুজরাট দাঙ্গার পরেও আজ পর্যন্ত নিজেদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা করেনা, যে দল বিশ্বাস করে মুসলমানরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সেই দলের যে আদর্শ তাকে বিশ্বাস করেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি অবশ্য বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসে যুক্ত হয়েছেন এবং দাবি করছেন- তিনি অসাম্প্রদায়িক এবং ভোট ময়দানে নেমেছেন। মানুষের দরবারে যাচ্ছেন বাবুল। শুক্রবার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তাকে টুপি পরতে দেখা গিয়েছে, ফেসবুকে অবশ্য মানুষ এ নিয়ে কটাক্ষ করছেন। বলছেন- মুসলিমদের টুপি পরাতে চাইছেন বাবুল সুপ্রিয়।
বালিগঞ্জ বিধানসভার মানুষ যদি মনে করেন যে সত্যিই আমরা সুনাগরিক, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্ব এবং সহবস্থানমূলক সমাজের পক্ষে, তাহলে তাদের সেই মতামত ব্যালট বক্সে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এই পরীক্ষার মধ্যে পড়েছেন বালিগঞ্জ বিধানসভার মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় একসময় যারা নো-ভোট-বিজেপি বলতেন, তারাও বলছেন- নো-ভোট_টু-বাবুল।
এরইমধ্যে মুসলিম দরদ উথলে পড়েছে ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের১ শোনা যাচ্ছে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া নাকি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি যে কত ভোট পাবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি যদি প্রকৃত গণতন্ত্রের পক্ষে হন, বাবুল সুপ্রিয়র বিপক্ষে হন, তাহলে কেন ভোটে দাঁড়াচ্ছেন এ নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। তাহলে কি বাবুলের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রকৃত পক্ষে বাবুল সুপ্রিয় পক্ষেই থাকছেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া? এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। সে উত্তর অবশ্য পেতে অনেক দেরি। বালিগঞ্জ তাদের পরীক্ষার খাতা কিংবা রেজাল্ট দেখবে। তার আগে খেলা হবে আর মানুষ খেলা দেখবেন। 

Post a Comment

1 Comments

  1. বাবুলের মতো একটা হিংস্র জন্তুকে শিক্ষা দেওয়ার এমন সুযোগ আর পাওয়া যাবেনা,,, সেই সাথে মুসলিমদের হিজাব পড়ে মুসলিমদের মাথায় জয়প্রকাশদের বসানোর যে নাগপুরি পরিকল্পনা মমতা ব্যানার্জী করছে,,করে চলেছে ,,তাকেও উচিত শিক্ষা দেবার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে ,বালিগঞ্জ বাসীর কাছে,,
    চালাকির,অসততার,বিদ্বেষের কুনাট্যকারীদের গমতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে বালিগঞ্জবাসী সেই শুরু করবেন,,এই প্রত্যাশা আমরা করছি,

    ReplyDelete