মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও আদালত: আমির শেখের ঘটনার পর্যবেক্ষণ

আসিফ রেজা আনসারী

ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক দেখলেই যেন সন্দেহ জেগে ওঠে। তাতে যদি মুসলিম অর্থাৎ আরবি শব্দের কোনও নাম থাকে আর কথাই শোনা হবে না। ব্যাটা নির্ঘাত বাংলাদেশি! চলো বন্দি করো। পেঁদিয়ে লাল করলেই শিকার করবে আসল বাড়ি কোথায়। এভাবে চলছে অত্যাচার। কেউ কেউ মারের ভয়ে বলছেন আমার বাড়ি বাংলা, তারা শুনছেন বাংলাদেশ। ব্যাস তারপর তুলে দেওয়া হচ্ছে বিএসএফের হাতে , সোজা সীমান্তের ওপারে ঠেলে দাও। রাজ্যের বেশ কয়েকজন বাসিন্দার ক্ষেত্রে এরকমই নির্মম ঘটনা ঘটেছে। আইন, আদালত কোনোকিছুর তোয়াক্কা করছে না বিজেপিশাসিত রাজ্যের পুলিশ। নিজবাসভূমে পরবাসী করা করা হচ্ছে মুসলিমদের। এমনই একটি ঘটনা নিয়ে হৈচৈ হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অবশ্য বাধ্য হয়ে মালদহের আমিরকে দেশে ফিরিয়েছে বিএসএফ। তবু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। যদি তিনি বিদেশি হন তাহলে ফিরিয়ে আনা হলো কেন? আর যদি এ দেশেরই নাগরিক হন তাহলে বাংলাদেশি বলে কেন সীমান্তের ওপারে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল? এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিচার কি হবে ? নিদারুন মানসিক যন্ত্রণার ইনসাফ পাবে আমির শেখের পরিবার?

আপনারা সবাই খবরে দেখেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে দীর্ঘ দু’মাস পর ‘পুশব্যাক’ করে বাংলাদেশে পাঠানো মালদহের কালিয়াচকের শ্রমিক ফিরেছেন ভারতে। মঙ্গলবার বসিরহাট থানার পুলিশের হাতে তাঁকে তুলে দেয় বিএসএফ। নথিপত্র খতিয়ে দেখে তাঁকে পরিবারের হাতে তুলেও দেওয়া হয়।


এ নিয়ে আমির শেখ বলেন, “বেশি রোজগারের আশায় রাজস্থানে যাই। বাংলাদেশি সন্দেহে বিএসএফ তুলে নিয়ে যায়। দু’মাস জেল খাটি। তারপর আমাকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়।” এখনও আমির ও তাঁর পরিবারের লোকজনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। আমিরের বাবা জিয়াম শেখ বলেন, “বাংলায় কথা বলায় আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আধার, ভোটার কার্ড দেখানোর পরেও বাংলাদেশি বলা হয়। পরে বাংলাদেশের বিজিবি ফেরত পাঠায়। আমরা এতদিন কান্নাকাটি করেছি। আদালতের হস্তক্ষেপে ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। খুব খুশি হয়েছি।"

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রশাসন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমিরকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু যে দেশে সংবিধান স্বীকৃত ২২ টি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম, এই ভাষায় কথা বললেই তিনি বাংলাদেশি হয়ে যাবেন? যদি তাই হয়, তাহলে পাঞ্জাবিতে কথা বললে পাকিস্তানী, উর্দু কিংবা হিন্দিতে কথা বললে পাকিস্তানি? এরকম করা আসলে দেশের ঐক্য, বহুত্ববাদে আঘাত। সংবিধানের উপর আক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে বড় ভূমিকা নিতে পারে আদালত। স্বত:প্রণোদিত মামলায় কেন্দ্র এবং রাজ্যকে শায়েস্তা করতে পারে একমাত্র আদালতই। কারণ, সংবিধানের রক্ষাকারী খোদ মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট।

প্রসঙ্গত, আমির শেখ কাজের খোঁজে রাজস্থানে যান। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলায় স্থানীয় প্রশাসন নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে। প্রায় মাসদুয়েক তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরিবারের দাবি, বিএসএফ তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশব্যাক করে দেয়। এই ঘটনার জল গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। বিএসএফ যদিও ‘পুশব্যাকে’র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। ভুল করে আমিরই সীমান্ত অতিক্রম করে বলেই দাবি। শেষমেশ যদিও আদালতের নির্দেশে আমিরকে ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ। শুধু আমির শেখ নয়, শিশুসহ বীরভূমের ছয় বাসিন্দাকে বাংলাদেশি বলে ওপারে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। এই ধরনের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে। 

Post a Comment

0 Comments