আবু সামিমপ্রচার নয়, পরিচিতি পাক। গণমাধ্যমের প্রচারের আড়ালে মানুষ কতই মানবিক কাজ করে থাকেন তাঁরা নিশ্চয়ই আক্ষরিক অর্থেই ধর্মের অনুগামী হয়। ডান হাতে দান করলে বাম হাত বুঝতেও পারে না। ধর্মে তো এমন করেই দানের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া নিজামুদ্দিন পরবর্তী সময়ে যখন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ ও বিভেদের ঘনঘটা তখনই একজন দাড়িওয়ালা হাজী সাহেব অকাতরে করে যাচ্ছেন দান-ধ্যান। জাতি-ধর্মের বালাই নেই। এমনই এক মানুষের নাম হাজী শেখ আবুল খায়ের।
তৈরি করা হচ্ছে প্যাকেট। ্ইনসেটে হাজী শেখ আবুল খায়ের |
এই মহান হৃদয়ের মানুষটির বাড়ি হুগলি জেলার খানাকুল থানার পার হরিশ্চক গ্রামে। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। "মাকসাদ বেকারি ফুড প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড"-র কর্ণধার হাজি আবুল খায়ের ওই কোম্পানির ডিরেক্টর তথা পুত্র শেখ মুস্তাক হোসেনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বড় মানুষ পরিচয় দিয়েছেন, সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রণাম পাবার যোগ্য মানুষ হয়ে উঠেছেন। লকডাউন চলছে ফলে মানুষের কাজ নেই, সোজা কথা হাতে অর্থ নেই কারও। ঠিক ওই সময়ে হাজী আবুল খায়ের আঠারোটি গ্রামের প্রায় ১৩০০ মানুষকে ১৩ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। সমস্যা অনুযায়ী কাউকে ৫০০, কাউকে ১০০০, কেউ ২০০০, আবার কেউ কেউ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, গল্প আরও অনেকটা বাকি আছে। মার্চের ১৯ তারিখে ৪৫০ টি পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্পেশাল প্যাকেটে করে দিয়েছেন। সেখানে ময়দা-২ কেজি, চিনি-২ কেজি, ছোলা-১ কেজি, চিড়ে ৫০০ গ্রাম, খেজুর-২৫০ গ্রাম ও প্যাকেট ১ বিস্কুট। লকডাউন বৃদ্ধি পেতেই উনি মে মাসের ৪ তারিখে আবারও মানুষের মুখ দেখে কষ্ট উপলব্ধি করেছেন। কষ্টের গভীরতা দেখে ছোটো বাচ্চা যাদের সপ্তাহে ৬০০ টাকার টিনের দুধ লাগে এমন শিশুদের জন্য ২ লাখ টাকা বিতরণ করেন। একইসঙ্গে ৭০০ তুলে দিয়েছেন প্যাকেট করা খাদ্যসামগ্রী। যাতে ছিল আলু-১ কেজি, পিয়াঁজ-১ কেজি, ময়দা ১কেজি, তেল- ১ লিটার, চিনি-১ কেজি, খেজুর-২৫০ গ্রাম, ছোলা-৫০০ গ্রাম, চিঁড়ে-৫০০ গ্রাম, মুসুর ডাল-৫০০ গ্রাম।
ছবিতে- শেখ মুস্তাক হোসেন |
প্রসঙ্গত, হাজী সাহেব ব্যবসাসূত্রে কলকাতায় থাকেন। তবে এলাকায় মানুষ তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শুরু করেছে। এলাকার মানুষের কথায়, "দিল তো অনেকের আছে কিন্তু দিলওয়ালা ওনার মতো নেই।" অনেকের টাকা আছে তবে ওনার মতো মন কারও নেই। কেউ অসুস্থ হলেই ফোন আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ওনার স্নেহের সন্তান শেখ মুস্তাক; দেরি না করেই কলকাতা থেকে ঔষধ কিনে পাঠিয়ে দেন। সমাজসেবী মানুষটি আধুনিক মানসম্পন্ন এবং ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত স্কুলও চালান। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জীবনের উত্থান অত্যন্ত গরিব বাড়ি থেকে, তাই গরিবের কষ্ট হাড়েহাড়ে বুঝি। এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেব? যে মানুষটি মনে করেন অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো ঈমানী (ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস) কর্তব্য তিনি সুস্থ্য থাকুন বেঁচে থাকুন গরিবের রাজা হয়ে। এই প্রার্থনা দান গ্রহীতাদের। আসলাম শেখ বা জামিরুদ্দিনরা যখন ইফতারের দোয়ায় হাজী সাহেবের জন্য জান্নাত চাইছেন, তখন সুকান্ত, রমেশের প্রার্থনা, 'ভগবান মঙ্গল করুন।'
4 Comments
সত্যি এসমস্ত খবর প্রচার হবার দরকার আছে। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteদাদা দারুন লিখেছেন। সামিম স্যার তোমাকে আর The Bengal Mirror কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDeletebe with us. Always we will try to cover this kind of news. Socio-Economical problems and Way forwards.
DeleteWe are with you always... And certainly we are getting such an untold story from your platform....
Delete