কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান আইএসআই–এর ক্যাম্পাসে 'মুসলিম ও কুকুর' প্রবেশ নিষিদ্ধ!

আসিফ রেজা আনসারী

দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। দোষীদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা শ্রেণির মানুষজন বিদ্বেষপ্রচার শুরু করেছে। তাতে নাম জুড়েছে শহর কলকাতার একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। দিল্লির ঘটনার একদিন পরেও খবর প্রকাশ্যে আসে যে, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই–এর হস্টেলে আপত্তিকর কথা লেখা হয়েছে। 'এলাকায় মুসলিম ও কুকুর প্রবেশ' করতে দেওয়া উচিত নয় বলে লেখা হয়েছে। প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব সিভি রামন হলের নামাঙ্কিত ছেলেদের হস্টেলের সামনে বেশ কয়েকজায়গায় বিদ্বেষী মন্তব্য লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ। 
এভাবেই কটু কথা লেখা হয়েছে 

অভিযোগ, হস্টেলের প্রবেশ করার মুখে কুকুর প্রবেশ করবে না লেখার পাশেই কেউ বা কারা মুসলিম শব্দটিও জুড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে লেখা হয়েছে, 'নো মুসলিম', কোথাওবা লেখা হয়েছে, 'নো মুসলিম অ্যালাউড' ইত্যাদি। লেখা হয়েছে। অল্ট নিউজ এ নিয়ে খবর করেছে। বুধবার সকালে কেউ এটা করেছে বলে খবর। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে পড়ুয়াদের একাংশ। লিখিত অভিযোগে তদন্ত ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখার দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে, পড়ুয়াদের একটি গ্রুপেও ছবি পোস্ট করে বলা হয়, যে বা যারা এমনটা করে থাকুক তারা যেন ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু কেউ তাতে আমল দেয়নি। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিন বিশ্বব্রত প্রধান, হস্টেল ওয়ার্ডেন শুভময় মৈত্ররা খবর পেয়ে বিষয়টা দেখেন। কিন্তু সেভাবে কড়া পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। 
আইএসআই ক্যাম্পাস 


এ দিকে ঘটনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী ও বামনেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দিল্লির লালকেল্লার ঘটনা সন্ত্রাসী হামলা নাকি দুর্ঘটনা সেটা সরকার এখনও নিশ্চিত নয়, সেখানে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন বিদ্বেষ ও একটা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দাগিয়ে দেওয়া কাম্য নয় এমন ঘটনা ঠেকাতে আইএসআই কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবে বলেই আশা ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর–এর রঞ্জির শূর বলেন, বরানগরের আইএসআই–এর মত খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেলের গেটে, নানান হলের গেটে, দেওয়ালে, সিঁড়ির হাতলে মুসলিম বিদ্বেষী নানা ধরনের গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। এই সব গ্রাফিতিতে মুসলমানদের বারবার কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মুসলমান ও কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ ইত্যাদি।ডাস্টবিনের গায়ে লিখে রাখা হয়েছে মুসলমানদের জায়গা এইখানে। মঙ্গলবার এই সব গ্রাফিতি নজরে আসে। আজ বৃহস্পতিবার। দুই–দিন হতে চলল দোষীদের খুঁজে বের করার জন্য এখনও কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। আইএসআইয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকরা এখন কেন্দ্রীয় সরকার আনীত আইএসআই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। আমাদের আশঙ্কা, এই আন্দোলন নষ্ট করার জন্য খুবই পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। ঘৃণা এবং অবিশ্বাস ছড়িয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও গবেষকদের ঐক্য ভাঙতে চাইছে কোনও শক্তি। আইএসআই কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করা, ছাত্র বা গবেষকরা যুক্ত থাকলে মনোবিদ ডেকে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষক বা কর্মচারী যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Post a Comment

0 Comments