হিন্দ রজব: গাজায় ইসরাইলের নিষ্ঠুরতা তুলে ধরল কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভাল

আসিফ রেজা আনসারী

দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন করছে জায়নবাদী শক্তি ইসরাইল। ঐতিহাসিক দিক থেকে একটি ‘অবৈধ-রাষ্ট্র’ ফিলিস্তিনিদের নিজভূমে পরবাসী করেছে। গাজা ও ফিলিস্তিনের বিস্তীর্ণ এলাকার চারিদিকে ঘেরাটোপ, বর্তমানে নেই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার কোনও উপকরণ। বোমা আর গোলার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। আন্তর্জাতিক সব আইন-কানুন, আদালতের নির্দেশিকা ও নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে ধর্মস্থান, হাসপাতাল, স্কুল ইত্যাদি। বাদ যাচ্ছে না অ্যাম্বুলেন্সও। অনেকেই তাই সমালোচনা করে বলছেন--- পশ্চিমা দুনিয়ার গর্বকরা বেশকিছু বিষয় যেমন--- মানবাধিকার, নারী ও শিশুর প্রতি দরদভরা বিধান যে আদতে ফাঁকা আওয়াজ সেটাই প্রতীয়মান হয়। এক বিভৎস, নারকীয় ঘটনা সমানে চলেছে। তারই একটি দৃশ্যকে সামনে এনেছেন চলচিত্রনির্মাতা কাউথার বেন হানিয়া। তাঁর ডকুড্রামা ফিল্ম ‘দ্য ভয়েস অফ হিন্দ রজব’ প্রর্দশিত হল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে।

বেঙ্গল মিরর গ্রাফিক্স 

২০২৫ সালেই রিলিজ হয়েছে ‘দ্য ভয়েস অফ হিন্দ রজব’। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে নিহত হয় পাঁচ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব। সেই নারকীয় হত্যা ও মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা ‘রেড ক্রিসেন্ট’-এর তৎপরতাকে সু¨রভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক কাউথার বেন হানিয়া। ছবিটি মঙ্গলবার সকালে কোয়েস্ট মলের আইনক্স হলে দেখানো হয়। সিনেমা হল ছিল কানায় কানায় ভর্তি। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

ছবিটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ইসরাইলি বাহিনীর গোলাগুলিতে মানুষের হত্যাযজ্ঞ চলছে। দেখানো হয়েছে, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ তারিখে রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা একটি জরুরি কল পান। গাজায় গোলাগুলির মধ্যে গাড়িতে আটকা পড়ে একটি ৬ বছর বয়সী বালিকা। তাকে যেন উদ্ধার করা হয়, সেই কাতর আর্জি জানাতে থাকে শিশুটি। এ দিকে রেড ক্রিসেন্টের সেন্টারে থাকা  তাকে লাইনে রাখার চেষ্টা করার সময়, তারা তার কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তার নাম ছিল হিন্দ রজব।

রানা হাসান ফকিহ চরিত্রে সাজা কিলানি, নিসরিন জেরিস কাওয়াস চরিত্রে ক্লারা খৌরি, ওমর এ আলকামের চরিত্রে মোতাজ মালহীস এবং আমের হালেহেল মাহদি এম. আলজামাল চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। অসহায় শিশুকে উদ্ধার করার আকুল চেষ্টা ও ইসরাইলি সেনার বাধার জন্য সেটা না পারার যন্ত্রণা, শিশুকে উদ্ধারের রাস্তা বের করা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মায়ের মতো করে বিপদগ্রস্ত শিশুকে পাশে থাকার ‘আশ্বাস’ দেওয়ার মতো ঘটনা ফুটে উঠেছে। 

প্রসঙ্গত, ছবিটি এই বছর ৩ সেপ্টেম্বর ৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়েছিল। এই উৎসবে ছবিটি গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার এবং অন্যান্য প্রায় ছয়টি পুরস্কার জিতেছে। ১০ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়ায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় পেলেও আগামী ২৬ নভেম্বর ‘দ্য পার্টি ফিল্ম সেলস’-এর উদ্যোগে ফ্রান্সে মুক্তি পাবে। শুধু তাই নয়, ৯৮তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের জন্য তিউনিসিয়ান এন্ট্রি হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছিল। আর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখানো হল মঙ্গলবার।

Post a Comment

0 Comments