আসিফ রেজা আনসারী
গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস এবং রোমান চিকিৎসক গ্যালেন-এর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে ইউনানি পদ্ধতি চালু হয়। আরব এবং পারসিক চিকিৎসক যেমন আল রাযী, ইবনে সিনা, আল জাহরাবী বা ইবনে আন নাফীস একে জনপ্রিয় ও ভরসাযোগ্য করে তোলে। একটা সময় ভারতেও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতি বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে অবশ্য অন্যান্য নানান পদ্ধতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। এমন অবস্থায় ইউনানির বিকাশ ও উন্নতির জন্য আলোচনা করতে বিশেষ কনফারেন্স করল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আয়ুষ ডক্টরস্ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। কনফারেন্সের পোশাকি নাম দেওয়া হয় ‘আয়ুষকন-২০২৫’। সহযোগী সংস্থা ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়ো-ইকিউভ্যালেন্স স্টাডি সেন্টার, স্কুল অফ ফার্মাসিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’। বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অডিটোরিয়ামে এই আলোচনাসভায় বহু বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। এ দিনের অনুষ্ঠানেই ক্যালকাটা ইউনানি মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ পারভেজ-এর লেখা ‘প্রিন্সিপালস্ অ্যান্ড প্রাক্টিস অফ রেজিমিনাল থেরাপি’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাস, সেই হাসপাতালেরই এমএসভিপি ডা. রঞ্জন অধিকারী, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার চ্যার্টাজি, তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন নেত্রী ও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. করবী বড়াল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সন্ময় কর্মকার, ডা. পি.কে. নিমানি, ডা. রাইস উদ্দিন, ডা. উৎপল চ্যাটার্জি, ডা. নওয়াব, ডা. জাইদুল বারি, ডা. ইসরার আহমদ, ক্যালকাটা ইউনানি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুহাম্মদ আয়ুব, ডা. এম এ পারভেজ, নারায়ণ পাণ্ডে প্রমুখ।
এ দিনের অনুষ্ঠানে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, বহু রোগ যা অ্যালোপ্যাথিতে সারে না, সেখানে আয়ুর্বেদ, ইউনানি, যোগা, আকুপাংচার বা নানান ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক চিকিৎসায় তা নির্মূল হয়। উদাহরণ দিয়ে ইমরান বলেন, অ্যালোপ্যাথিতে শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় সাময়িক সুফল মিললেও তাতে কিডনির ক্ষতি হয়, কিন্তু ইউনানিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই রোগের চিকিৎসা আছে। একইসঙ্গে সিআর অ্যাভিনিউতে থাকা কেন্দ্রীয় ইউনানি প্রতিষ্ঠানকে লিলুয়ার মতো দুর্গম স্থানে নিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেন ইমরান। এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
ডা. করবী বড়াল ইউনানি চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অত্যন্ত প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত। আপনারা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার বাহক। একইভাবে ইউনানির প্রশংসা করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল সর্বদা আপনাদের জন্য খোলা। আপনারা আমাদের সবরকম সহযোগিতা পাবেন। এমএসভিপি ডা. রঞ্জন অধিকারীও বেশি বেশি করে গবেষণার উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন।
রাজ্যের মন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা টেলিফোনিক-বার্তায় বলেন, আয়ুষের অন্যমত শাখা হিসাবে ইউনানি যথেষ্ট জনপ্রিয়। আগামী দিকে আপনাদের গবেষণা, পঠনপাঠন জনসমাজে সাড়া জাগাবে বলেই আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

0 Comments