আসিফ রেজা আনসারী
বহু ধর্মগুরুর মুখে প্রায়শই শোনা যায়-পৃথিবী বিস্ময়ে পরিপূর্ণ। আর এই বিস্ময়ের শেষ নেই। চলতে ফিরতে মানুষ নানান জিনিসের সম্মুখীন হয়, যেগুলির অনেক কিছুই হয়তো তার অজানা। আবার অনেক কিছুই আছে যেগুলি আপাতদৃষ্টিতে অসাধ্য হলেও কেউ কেউ তা করে দেখায়। এমনই একটি বিস্ময়জনক অথচ বহুজন সমাদ্রিত কাজ করে চমকে দিয়েছে শহর কলকাতার কিশোরী রামশা রইস। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সে লিখে ফেলেছে পাঁচটি বই। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশের বহু জায়গা থেকে মিলেছে সম্মান।
রামশা রইস কলকাতার পার্ক লেনের সাইফি হল স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে আইএসসি শেষ করেছে। এই শিক্ষাগত যোগ্যতার বাইরে সে সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার কৃতিত্বের ছাপ রাখছে। বলা চলে ভাষা বা ভৌগোলিক সীমানার বাইরে সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ঔপন্যাসিকের দাবিদার। মাত্র চার বছরের মধ্যে এই উদীয়মান লেখিকার কলম থেকে পাঁচটি গ্রন্থের জন্ম নিয়েছে। জানা গিয়েছে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে 'ফায়ারড' নামে বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিমূলক উপন্যাস লেখে রামশা। যেটি ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এ উপন্যাসটি নোশন প্রেস পাবলিকেশন প্রকাশ করেছিল। পরবর্তী বই ছিল 'দ্য ডোর টু দ্য স্টারস' যা শিশুদের জন্য ১৫টি ছোটগল্পের একটি সংকলন। এটি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ব্লু-রোজ পাবলিকেশন থেকে বেরিয়েছিল। একই বছরের এপ্রিল মাসে একটি অলৌকিক ঘটনাভিত্তিক উপন্যাস 'দ্য হাউলিং আলফা অ্যান্ড দ্য ফরেস্ট অফ ডিসেপশন (পর্ব-১)' নোশন প্রেস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। 'সিক্যুয়েল দ্য হাউলিং আলফা অ্যান্ড দ্য সোর্ড অফ বেন (পর্ব-২)' ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।
![]() |
TBM Graphics |
রামশা রইস বয়সে নবীন। স্বাভাবিকভাবেই তার সমবয়সীদের মনের কথাও ফুটে উঠেছে লেখায়। নিজের প্রজন্মের একজন সত্যিকারের প্রতিনিধি হিসেবে রামশা মধ্যপ্রাচ্যের গাজা উপত্যকা এবং তার পশ্চিম তীরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের উপর ঘটতে অত্যাচার নিয়ে কলম ধরেছে। দুনিয়া কাঁপানো এই ঘটনা নিয়ে সে যে উদাসীন নয়, সেটাও ফুটে উঠেছে লেখায়। অসহায় ফিলিস্তিনিদের হৃদয়বিদারক যন্ত্রণা এই কিশোরী ঔপন্যাসিককে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে 'টিয়ার্স অফ ইনোসেন্ট' নামে একটি উপন্যাস লিখতে বাধ্য করে। এটিও প্রকাশ করে নোশন প্রেস পাবলিকেশন RECOR সাহিত্য জীবনের স্বল্প সময়ের মধ্যে রামশা পাঁচটি বই লিখেছে যা বিখ্যাত সব ভারতীয় প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলি অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, নোশন প্রেস স্টোর এবং আরও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে।
রামশা রইস-এর কথায়, দীর্ঘ মহামারীপর্বে বিশ্বজুড়ে যখন লকডাউন, তখন প্রথম উপন্যাস ফায়ার্ড-এর ধারণাটি প্রথমবারের মতো মনে আলোড়ন তুলেছিল। বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর এবং এত অল্প বয়সে সাহিত্যিক কৃতিত্ব সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এছাড়াও সে জন্মসূত্রে ইংরেজি ভাষাভাষী নয়। আন্তর্জাতিক বুক অফ রেকর্ডস সংস্থা সম্প্রতি 'ম্যাক্সিমাম নোভেল রিটেন অ্যান্ড পাবলিশড বাই আ টিন-এজার' বিভাগে সম্মান জানিয়েছে। এটি রামশা রইস-এর বিশ্ব রেকর্ড। রক্ষণশীল উর্দুভাষী সংখ ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন কিশোরীর পক্ষে এই যোগ্যতা অর্জন ছিল বেশ কঠিন। কেননা, তার পরিবারে না আছে উল্লেখ যোগ্য সাহিত্যিক পটভূমি, আর্থিক সহায়তা বা অন্যকিছু। তারপরও রামশা দুনিয়ার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। রামশা-র লেখায় ফুটে উঠেছে মানুষের কথা। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য অহরহ বিভেদমূলক এবং অসহিষ্ণু শক্তির আক্রমণের শিকার, বিশ্বজুড়ে মানবতা সংকটে। সেই জায়গায় সে তুলে ধরছে মানবিকতা, সহিষ্ণুতা ও মুক্তিকামীদের মনের কথা।
(সৌজন্যে- পুবের কলম)
0 Comments