মসজিদ-মাদ্রাসা কেড়ে নিতেই নয়া ওয়াকফ আইন: ধরনামঞ্চে পার্সোনাল ল’ বোর্ড

আসিফ রেজা আনসারী

বিজেপি সরকারের অভিসন্ধি স্পষ্ট। তারা মুখে ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নতির কথা বললেও আসলে মুসলিমদের মসজিদ মাদ্রাসা, ইত্যাদির জমি হাতিয়ে নিতে চাইছে। শনিবার দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনামঞ্চ থেকে এভাবেই সরব হলেন মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের নেতৃত্ব। এমনিতেই নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ জারি রেখেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড। পার্লামেন্টেও সরব হয়েছিল বিরোধী-শিবির। কিন্তু সংখ্যার জোরে বিল পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতির সই এবং কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে আইন কার্যকর করা হয়েছে। এরই বিরুদ্ধে শনিবার দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনায় বসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড। দিল্লি পুলিশ মাত্র ১০০ জন মানুষের সমাগমের অনুমতি দিয়েছিল।

সভায় ল' বোর্ডের মিডিয়া ইনচার্জ এস.কিউ.আর ইলিয়াস বলেন, এর আগে আমাদের প্রতিবাদসভায় সাড়ে চার লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এবার দেখা গেল পুলিশ বাধা সৃষ্টি করল। মাত্র ১০০ জনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটা অন্যায়। তিনি আরও বলেন, নতুন আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে, পার্লামেন্টে বিরোধীরাও সরব হয়েছে, কিন্তু সরকার তাতে আমল দেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, সংখ্যার জেরে আইন প্রণোয়ন করেছে বিজেপি।

নিজস্ব ছবি 

তেলেঙ্গানার প্রতিনিধি ইবনে সাউদ বলেন, তেলেঙ্গানা সরকার স্পষ্ট করেছে সুপ্রিম কোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত নয়া আইন লাগু হবে না। নতুন করে বোর্ড গঠন না করার বিষয়েও অবস্থান জানিয়ে সরকার। আমি বিজেপি-বিরোধী সব রাজ্যকে বলব- আমাদের মতো আপনারাও এটাকে অনুসরণ করুন। এসআইও’র সভাপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, বিগত দিনের মতো আমাদের সংগঠন ল’ বোর্ডের পাশে থেকে লড়াই করবে।

এ দিকে পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহিম মোজাদ্দেদী বলেন, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশ। দূর্বলশ্রেণির মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া সরকারের নৈতিক কর্তব্য। সংবিধান সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নয়া ওয়াকফ আইনের মাধ্যমে মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদি ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মীয় সম্পত্তির সুরক্ষা থাকলেও কেন্দ্র ওয়াকফের দিকে কেন নজর দিচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন ফজলুর রহিম মোজাদ্দেদী। একইভাবে সরব হন বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ।

এ দিন ধরনামঞ্চ ও প্রতিবাদসভায় উপস্থিত থেকে শিখ পার্সোনাল ল’ বোর্ডের প্রতিনিধি প্রফেসর জগমোহন সিং বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা আপনাদের পাশে থাকব। ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে মুসলিমদের পক্ষে থাকবে শিখ সম্প্রদায়। তাঁর প্রত্যয়, এই আইন একদিন না একদিন বাতিল হবেই।

সাংসদ ও ইমাম মাওলানা মহিবুল্লাহ নাকভী জানান, পার্লামেন্টে অনেক শক্তিশালী বিরোধিতার পরেও জোর করে আইন পাস হয়েছে। মিম সাংসদ আসাদ উদ্দিন ওয়েসি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কিছু বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিলেও তা সন্তোষজনক নয়। সরকার নতুন করে ওয়াকফ করতে দেবে না। এএসআই বা সরকারের হাতে থাকা সম্পত্তিতে নামায বন্ধ করে দিতে পারে। সে জন্য সবাইকে জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ল’ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরাও একইভাবে নয়া আইনের বিরুদ্ধে সরব হন। জামাআতে ইসলামি হিন্দের সাদাতুল্লাহ হোসাইনিও সরব হন। বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু তালিব রহমানী। 

এ দিনের ধরনামঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ও অল ইন্ডিয়া তৌহিদী জনতার মাওলানা হাসিবুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান বলেন, বেশি মানুষকে জমায়েত হতে দেওয়া হয়নি, এটা বেদনার। মুসলিমরা ধর্মীয় অধিকার রক্ষার জন্য যে লড়াই শুরু করেছে, তা আগামীতেও জারি থাকবে। ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে বোর্ডের নির্দেশ মেনে সংগ্রাম চলবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অন্যদিকে মাওলানা হাসিবুর রহমানের কথায়, কেন্দ্র সরকার মানুষের অধিকার পর্যন্ত কেরে নিতে চাইছে। আমরা সাংবিধানিক অধিকারে ওয়াকফ বাঁচাতে লড়াই করব।

Post a Comment

0 Comments