প্রোমোটারকে ওয়াকফ সম্পত্তি বেচে দিচ্ছে বোর্ড ? তাঁদের দানকৃত জমি নিয়ে প্রশ্ন নবাব আবদুল লতিফের পরিবারের

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: নবাব আবদুল লতিফ উনিশ শতকের একজন প্রখ্যাত বাঙালি শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। তিনি মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। সমাজের নানান অবদানের জন্য তিনি খানবাহাদুর, নবাব প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হন। অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার রাজাপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। আবদুল লতিফের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা মাদ্রাসার ইংরেজি ও আরবির অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৪৯ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৮৭৭ সালে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন আবদুল লতিফ। দরিদ্র নীল চাষীদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণের ক্ষেত্রে ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠনেও তাঁর অবদান ছিল। এর বাইরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত হন। শুধু তাই নয়, তাঁর পরিবার একটা বড় সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেয়। কলকাতার ৪৫, বেনিয়াপুকুর রোডে মৃত নাজুমুননিশা বেগম ওয়াকফ এস্টেট নামে সেই সম্পত্তি পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডে নথিভুক্ত আছে। যার ইসি নম্বর ৩৭৭৬।

এই পাঁচিলের পেছনে রয়েছে জমি। 

জানা গিয়েছে, বহু পুরানো এই ওয়াকফ সম্পত্তি প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ২০১০ সালে ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে ইরফান আলম, মুহাম্মদ শানাওয়াজ আলম ও হুমায়ুন হাফিজ-এর মধ্যে চুক্তি হয়। সূত্রের খবর, ওয়াকিফ অর্থাৎ- সম্পত্তির দাতার ইচ্ছা এখানে মুসলিম মেয়েদের জন্য হস্টেল তৈরি করা হোক। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ড তাতে আমল দিতে চাইছে না।

ওয়াকফ বোর্ডের কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন ওয়াকিফ-এর পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। প্রথম মুতাওয়াল্লির বর্তমান উত্তরসূরী হিসাবে আসেফা কাইয়ুম নামে একজন ওয়াকফ বোর্ডের কাছে অনুরোধ করেছেন, সম্পত্তি যাতে প্রোমোটারদের হাতে না দেওয়া হয়। বরং সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য সেখানে একটি গার্লস হস্টেল তৈরি করা হোক। ওয়াকফ আইনে যেসব সমাজকল্যাণমূলক কাজের কথা উল্লেখ আছে বা ওয়াকফ-এর মূল উদ্দেশ্য যেহেতু আল্লাহ্র নামে সম্পত্তি সমর্পিত হয়, তাতে কওমের খেদমত করা যাবে এমন কিছু করা দরকার। সেইসব কথা তুলে ধরেছেন ওয়াকিফ-এর আইনজীবী।

এ নিয়ে ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। এ দিকে অনেকেই বলছেন, গ্রামবাংলার মেয়েরা কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসছে। বাইরে তাদের অনেক সময় ঘর মিলছে না। ওয়াকফ-এর জমিতে নয়া হস্টেল তৈরি হলে এখানে থেকে কম খরচে পড়াশোনার সুবিধা হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এ মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসছে, ওয়াকফ বোর্ডকে তাদের কথা বিবেচনা করতে হবে বলেও দাবি উঠছে। এখন প্রশ্ন বহু মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তিতে ছাত্রীনিবাস তৈরি হবে নাকি চলে যাবে প্রোমোটারদের হাতে!

সৌজন্যে: পুবের কলম।

Post a Comment

0 Comments