বারুইপুর: বিল্ডার্স দোকানের মাল চুরি করে হনুমান মন্দিরের গেট তৈরির প্রতিবাদ, করিম মোল্লাকে এলোপাথাড়ি কুপানোর অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: পশ্চিম বর্ধমানে বিজেপি-ঘনিষ্ট একদল দুষ্কৃতকারীদের হাতে বয়স্ক মুসলিম ব্যবসায়ীদের আক্রান্ত হওয়ার পরেও মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি। এ নিয়ে জনমানসে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তরফে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি তোলে হচ্ছে। এরই মধ্যে ফের সামনে এলো কথাকথিত ‘হিন্দুত্ববাদী’ ও বজরং দলের সমর্থকদের হাতে এক মুসলিম যুবকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থানার অন্তর্গত উত্তর মুকুন্দপুর (মাখালতলা মাদ্রাসা গেট নামে পরিচিত) গ্রামের বাসিন্দা করিম মোল্লার (২৭) উপর আক্রমণ করে কাঁঠালবেড়িয়া (বৃদ্ধবাসী)-র একদল দুষ্কৃতকারী। রীতিমত পূর্ব-পরিকল্পনা করে প্রাণে মারার ছক হয়েছিল বলে অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীরা। শুধু তাই নয়, পুলিশ প্রথম থেকে সক্রিয় হলে এমনটা আটকানো যেত বলেই মনে করছেন সবাই।

আক্রান্ত ব্যক্তির মায়ের সঙ্গে জমিয়ত সদস্যরা 

জানা গিয়েছে, গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ টোটো নিয়ে শংকরপুর থেকে হোটর স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় বাড়ির অনতিদূরেই আক্রান্ত হন করিম মোল্লা। করিমের বাড়ি মগরাগাট থানার মধ্যে পড়লেও তার মাত্র ৩০০ মিটার দূরে বারুইপুর থানা এলাকায় আক্রান্ত হয় করিম মোল্লা। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশে বারবার অনুরোধ করার পরেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। পরে গ্রামবাসী ও করিমের আত্মীয়রা মৃতপ্রায় অবস্থায় করিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রাস্তায় মহরাহাট থানার পুলিশ নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে করিম মোল্লাকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও শরীর, মাথা, গাল, প্রভৃতি স্থানে কোপানোর ক্ষত রয়েছে। কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই বললেই চলে।

সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে আক্রান্ত করিম মোল্লার বিধবা মা এশারন মোল্লা বলেন, আমার চার ছেলে। তারা কেউ ছোট ব্যবসা করে, কেউ টোটো চালিয়ে সংসার চালায়। সম্প্রতি কাঁঠালবেড়িয়ায় কাঠ-মিলের সামনে একটি হনুমান গেট তৈরি করছে বজরং দলের লোকেরা। সেই গেট তৈরির জন্য বালি-ইট ইত্যাদি চুরি করে মূল অভিযুক্ত সুভাষ কয়াল, পুলক কয়াল, জয়দীপ কয়াল, গৌরহরি কয়াল, ত্রিদীপ ও সৈকত রায়ের দলবল। সবাই বজরং দল করে বলে জানতে পেরেছি। আমার ছেলে রহিম মোল্লা বিল্ডার্স দোকান চালু করেছে, সেই জিনিসপত্র চুরি করার প্রতিবাদ করলে ঝামেলা করে পুলক, সত্যেন ও তার দলবল। এ নিয়ে বারুইপুর ও মগরাহাট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। পুলিশ মিটমাট করার চেষ্টাও করে। কিন্তু বজরং দলের লোকজন জোর করে মুসলিমদের ধরে ধরে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার হুমকি দেয়, মারার হুমকিও দিয়েছিল। এ নিয়ে আমরা বারবার পুলিশকে জানালে, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল কিছু হবে না। আর দেখা গেল আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে কুপিুয়ে দেওয়া হল।

হোসেন গাজি-সহ বিশিষ্টরা

রহিম মোল্লা ও অন্যপক্ষের একজনকে পুলিশ ধরেছিল বলেও জানা গিয়েছে। এমনকী, ২৩ দিন জেলে থেকে জামিন পান রহিম মোল্লা। সে জামিন নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়েও প্রাণে মারার ছক কষেছিল পুলকদের লোকজন। তারপর পুলিশ এসে তাকে ঘরে তোলে। স্থানীয়দের বক্তব্য, পুলিশ জানত একটা ষড়যন্ত্র চলছে তারপরেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান হোক বা ঘরের পাশে মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে বিধায়ক নমিতা সাহার বাড়ি হলেও তিনি তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি।

পুলিশ অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে, উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিক, দাবি স্থানীয়দের। একই দাবিতে সরব হয়েছে জমিয়তে উলামার সদস্যরা। বৃহস্পতিবার আক্রানকে দেখতে হাসপাতালেও যান সংগঠনের সদস্যরা। তার আগে করিমের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। জমিয়তে জেলা কর্মকর্তা মুফতি আমীর, আজিজুর রহমান যান। সমাজকর্মী হোসেন গাজি-সহ আরও লোকজন গিয়েছিলেন।

জানা গিয়েছে, পুলিশ চারপাঁচজনকে আটক করেছে, তবে মূল চক্রান্তকারীরা কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে দুই থানার পুলিশ গ্রামে অস্থায়ী ক্যাম্প করে টহল দিচ্ছে। এলাকা শান্ত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মুসলিমরা আতঙ্কে আছেন বলে জানান। আর পুলিশের বক্তব্য, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আর কতদিন পর? প্রশ্ন তুলছেন উত্তর মুকুন্দপুরের লোকজন। গ্রামবাসীরা চাইছেন, পুুলিশ দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন যাতে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট না হয়।।  

(সৌজন্যে পুবের কলম)

Post a Comment

0 Comments