স্ত্রী ও পুত্র-সহ দানিশকে বাংলাদেশে পাঠাল পুলিশ: হাইকোর্টে মামলার শুনানি শুক্রবার

আসিফ রেজা আনসারী

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা দানিশ শেখ (৩০), তার স্ত্রী সোনালি খাতুন (২৬) এবং এক আট বছরের পুত্রকে ‘বেনাগরিক’ বলে দাগিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এবার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস করপাস পিটিশন দায়ের করেছে তাদের আত্মীয়রা। ইতিমধ্যেই বীরভূমের পাইকর থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে বলেও খবর। জানা গিয়েছে, দানিশ শেখ, সোনালি খাতুন এবং আট বছরের এক পুত্রকে প্রথমে আটক করে দিল্লি পুলিশ। সবাইকে অবৈধ বাংলাদেশি বলে দাবি করা হয় এবং বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দানিশ শেখ কাগজ ও প্লাস্টিক কুড়ানোর কাজে গিয়েছিল দিল্লি। প্রায় সে ১০-১২ বছর ধরে সেখানেই কাজ করে। তবে ঈদ-পরবে বীরভূমের বাড়িতে আসত দানিশ। গত মে মাসে তারা আবার দিল্লি ফিরে যায়। পরে আত্মীয়রা জানতে পারেন যে, দানিশদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারকে পুলিশ কোনও তথ্য দেয়নি বলেও খবর। পরে আত্মীয়রা দিল্লি পুলিশকে দানিশদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সব নথিপত্র পাঠায়। তাতে অবশ্য আমল দেয়নি দিল্লি পুলিশ। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ ভুক্তভোগীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

Danish and family. 

পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম বলেন, এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তাঁরা বাংলায় কথা বলেন, তাই বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আদালতে গিয়েছি। ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতে হেবিয়াস করপাস পিটিশন করেছে। আশা করব, দেশের নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনতে মহামান্য আদালত হস্তক্ষেপ করবে। তিনি আরও জানান, কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচটি মামলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট দিল্লি পুলিশ-এর বিরুদ্ধে বীরভূম জেলার মুরারই এবং পাইকর ব্লকের মোট ছয় জনকে তার মধ্যে একজন নাবালক ছেলেকে বেআইনি আটক করার অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি হেবিয়াস করপাস মামলার শুনানি করবে সামনের শুক্রবার। সামিরুল বলেন,বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর বাঙালিবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।

বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে দানিশের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের থেকে যাচাই ও জিজ্ঞাসাবাদ করার পর এটা হয়েছে বলেও দাবি পুলিশের। যাদিও দানিশের আত্মীয়রা তা মানতে নারাজ। গত মাসে এভাবেই ৭জনকে সন্দেহজনক বাংলাদেশি বলে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে ফের দেশে ফেরাতে বাধ্য হয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এক্ষেত্রে কি হয় সেটাই দেখার! এ দিকে নতুন করে খবর এসেছে, বুধবার ফের ৪০০ জন বাঙালি শ্রমিককে আটক করেছে বিজেপি–শাসিত রাজ্য ওড়িশা। সবাইকে বন্দি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলেও শোনা যাচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

Post a Comment

0 Comments