বিশেষ প্রতিবেদন, বেঙ্গল মিরর ডেস্ক, ১২ জুলাই, ২০২৫: “পৃথিবী এক বিরাট মঞ্চ, আর আমরা সবাই সেই মঞ্চের অভিনেতা”—উইলিয়াম শেক্সপিয়রের এই বিখ্যাত উক্তিকে বাস্তবে রূপ দিল মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল ও মেডিকা অঙ্কোলজি (মনিপাল হসপিটালস নেটওয়ার্ক-এর একটি ইউনিট)। অশোকনগর নাট্যায়নের সহযোগিতায় আয়োজিত হয় এক অভিনব নাট্যপ্রদর্শনী ‘রঙ্গব্যঙ্গ’, যেখানে মঞ্চে অভিনয় করলেন ক্যানসারজয়ীরা। নাটক নির্মিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি ছোট নাটক অবলম্বনে। সেগুলির মধ্যে ছিল ‘আর্য ও অনার্য, ‘নতুন অবতার’, ‘অন্ত্যেষ্টি সৎকার’, ‘অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি’ এবং ‘স্বর্গীয় প্রহসন’। নির্দেশনায় ছিলেন খ্যাতিমান নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন। ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ নামে থিমে আশা, সহনশীলতার ও জীবনের উদযাপন হিসেবে প্রতিফলিত হয় গোটা অনুষ্ঠান। নাটকে ক্যানসারজয়ীদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন প্রখ্যাত অভিনেতা ফাল্গুনী চ্যাটার্জী, শান্তিলাল মুখার্জী, মাসুদ আখতার, ঋত্বব্রত মুখার্জী ও আশোকনগর নাট্যায়নের নাট্যশিল্পীরা। অন্যদিকে উপস্থিত ছিলেন মেডিকা অঙ্কোলজির চিকিৎসক প্রফেসর (ড.) সুবীর গাঙ্গুলি, ড. সৌরভ দত্ত।
![]() |
এক বিশেষ মুহূর্তে বিশিষ্টরা |
এ নিয়ে চন্দন সেন বলেন, “রঙ্গব্যঙ্গ’ আমার জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন নির্দেশনার অভিজ্ঞতা। নাটকটির ৬৬টি চরিত্রের মধ্যে ১৫-১৬টি আজ ক্যানসারজয়ীদের হাতে। আমি চাই, বছরের শেষে সমস্ত চরিত্র ক্যানসারজয়ীরাই অভিনয় করুক।”
প্রফেসর (ড.) সুবীর গাঙ্গুলি বলেন, “ক্যানসার চিকিৎসা শুধু শরীরের নয়, মানসিক ও আত্মিক শক্তিকেও জাগ্রত করতে হয়। আজ আমাদের ক্যানসারজয়ীরা যে অভিনয়ে তাঁদের যন্ত্রণা থেকে শক্তি তৈরি করলেন, তা দেখে আমি গর্বিত।” ড. সৌরভ দত্ত বলেন, “প্রত্যেক ক্যানসারজয়ীর জীবনে এক সাহসিকতার অধ্যায় আছে। ‘রঙ্গব্যঙ্গ’-এর মাধ্যমে আমরা তাঁদের সেই অধ্যায় মঞ্চে তুলে ধরার সুযোগ দিয়েছি।”
নাটকে অংশগ্রহণকারীরা |
গৌতম রায়চৌধুরী, অমিতাভ সরকার ও মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনজন ক্যানসারজয়ী অভিনেতা বলেন, “এই মঞ্চ আমাদের কাছে যন্ত্রণাকে শক্তিতে রূপান্তরের জায়গা। ক্যানসার আমাদের শরীরকে থামাতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাদের মনের কণ্ঠকে নয়। এই নাটক আমাদের গর্বের সঙ্গে নিজেদের গল্পবলার সুযোগ দিয়েছে।” ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মনিপাল হসপিটালস ইস্ট বলেন, “মানবিক আত্মা যে কোনও অসুস্থতার চেয়েও শক্তিশালী। আমরা বাতাসের দিক নির্ধারণ করতে পারি না, তবে পাল তুলে চলার পথ ঠিক করতে পারি। ‘রঙ্গব্যঙ্গ’ দেখিয়ে দিল, চিকিৎসা শুধু ওষুধে নয়, সহানুভূতি, সাহস ও সৃজনশীলতার মধ্য দিয়েও হয়। আমরা গর্বিত যে এইযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং সাহসিকতার অংশ হতে পেরেছি।”
নাটকের একটি বিশেষ দৃশ্য |
প্রসঙ্গত, আইসিএমআরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৫.৭ লক্ষ, যা ২০২২ সালের ১৪.৬ লক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে ৩.৫ কোটি। এই ক্রমবর্ধমান সংকটের মাঝে, মনোবল ও মানসিক সুস্থতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই জরুরি পারস্পরিক প্রেরণা। সেই উদ্দেশ্যে ‘রঙ্গব্যঙ্গ’ ছিল এক সাহসী ও মানবিক প্রচেষ্টা।
0 Comments