বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ওবিসি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিজেপির তরফে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুকে সরাসরি সংরক্ষণকে দুর্নীতি বলে সরব হয়েছে গেরুয়া–শিবির। এবার পালটা মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওসিবি সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্যবাসীকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট বলেন, “সংরক্ষণ ধর্মের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে”—এই মিথ্যা প্রচার এখন রীতিমতো সামাজিক মাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক চক্রান্ত।
মমতা বন্দ্যোপাধায় জানান, ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক রায়ে ওবিসি তালিকা থেকে ১১৩টি শ্রেণিকে বাদ দেয়। পাশাপাশি, ওবিসি-এ ও ওবিসি-বি সাব-ক্যাটাগরি বাতিল হয়। এর ফলে সংরক্ষণের হার ১৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ শতাংশে। এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের বহু মানুষ সমস্যায় পড়েন। তাই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায়।এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ওবিসি তালিকা নতুন করে তৈরি করার অনুমতি দেয় এবং তিন মাস সময়ও দেয়। এর পর প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য গঠন করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশন। সেই কমিশন পুরনো বাতিল হওয়া ১১৩টি সহ মোট ১১৭টি শ্রেণির অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ শুরু করে। কমিশন বেঞ্চমার্ক সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাস্তবায়ন করে ব্যুরো অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্স। এরপর হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে সেই তালিকার পাবলিক নোটিফিকেশন করা হয়, যা ব্লক স্তরে প্রচার করা হয়। পরে আরও ২৬টি শ্রেণি অন্তর্ভুক্তির আবেদন করে, এবং কমিশন তাদের নিয়েও সার্ভে শুরু করে।
![]() |
File Photo |
ওবিসি সংরক্ষণের ব্যাপারে বিধানসভায় এ দিন একটি স্ট্যাটাস রিপোর্টও পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ে বাতিল না হওয়া ৬৬টি শ্রেণির মধ্যেও সাব-ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ৮ মে একটি নতুন নোটিফিকেশন ইস্যু করে রাজ্য সরকার। ২৭ মে ৫১টি এবং ৩ জুন আরও ২৫টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে, সাব-ক্যাটাগরাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়—ওবিসি-এ বিভাগে ৩৫টি এবং ওবিসি-বি বিভাগে ৪১টি শ্রেণি রাখা হয়। ২৭ মে-ই বাতিল না হওয়া ৬৬টি শ্রেণির মধ্যে ৬৪টি শ্রেণিকে আলাদা সাব-ক্যাটাগরি হিসেবে ভাগ করা হয়—ওবিসি-এ ১৪টি এবং ওবিসি-বি ৫০টি। সবশেষে ৩ জুন, রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণের হার ফের বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হয়। এর মধ্যে ওবিসি-এ ৭ শতাংশ এবং ওবিসি-বি ১০ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। বর্তমানে মোট ১৪০টি শ্রেণি ওবিসি তালিকায় রয়েছে—ওবিসি-এ ৪৯টি এবং ওবিসি-বি ৯১টি। এবং আরও ৫০টি শ্রেণির ওপর সমীক্ষা চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলেজে ভর্তি এবং বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য ওবিসি সার্টিফিকেট প্রদান শুরু হবে। বহু নিয়োগ বোর্ড এতদিন ভর্তি বন্ধ রেখেছিল। এখন সেই প্রক্রিয়াও চালু হবে। তিনি বলেন, “সিপিএমের আমলে কোনও সার্ভে হয়নি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরই বেঞ্চমার্ক সার্ভে করে এই তালিকা তৈরি করেছি। ওবিসি-এ তুলনামূলকভাবে বেশি অনগ্রসর। তাই তাদের জন্য বেশি সংরক্ষণ রাখা হয়েছে।” শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রোজ সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, কত ধরনের ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। এই কারণেই আমি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করা জরুরি বলে মনে করেছি।”
0 Comments