ম্যাডলিন: গাজায় চলমান সংকট ও পশ্চিমা-দুনিয়ার মুখ-মুখোশ

আসিফ রেজা আনসারী

মানবাধিকার, মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ইত্যাদি শব্দবন্ধ নিয়ে পশ্চিমা-বিশ্ব গর্ব করে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বজুড়ে অশান্তি, ক্ষুদ্র রাজনীতিক স্বার্থ ও নয়া-সাম্রাজ্যবাদের জন্মদাতা সেই পশ্চিমারাই। মধ্যপ্রাচ্যকে রণভূমি করা হোক বা গাজায় চলমান মানবতার সংকট, সবটাই তথাকথিত আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর কুট-কৌশলের ফসল। স্বাভাবিকভাবেই গাজায় ত্রাণবাহী জাহাজ ও ইসরাইলে হুংকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রবিবার বড়সড় হুমকি দিয়েছে জায়নবাদী ইসরাইল। এক ডজন ফিলিস্তিনি সমর্থক সমাজকর্মী বহনকারী জাহাজ এবং গাজায় পৌঁছানোর জন্য কিছু জরুরি ত্রাণসামগ্রী আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। দেশটি তার সামরিক বাহিনীকে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে উপকূলীয় নৌ-অবরোধ লঙ্ঘন রুখতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে তারা। বলতে গেলে, ইসরাইলের উপকূলে কেউ এলেই আটকানোর জন্য "যে কোনও উপায়" অবলম্বন করতে হবে। মানে নিরস্ত্র, ত্রাণবাহী, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনের লোকদের খুন করে হলেও আটকানো হবে। স্পষ্ট কথা গাজাবাসীর জন্য যেন কেউ কিছু না করতে পারে।

এই সেই জাহাজ

জানা গিয়েছে, দ্য ম্যাডলিন নামে বেসামরিক জাহাজে করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজার জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় দুই দশক-দীর্ঘ গাজায় চলমান অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা নিয়ে জাহাজটি গত ১ জুন সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমানে তা গাজার কাছাকাছি। রবিবার মিশরের উপকূলে ছিল জাহাজটি, যা গাজা থেকে মাত্র ১৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে। যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে সুইডিশ অধিকারকর্মী তথা পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ইউরোপীয় সংসদের সদস্য রিমা হাসান। অন্যান্যদের মধ্যে আছেন, লিয়াম কানিংহাম, আয়ারল্যান্ড (বিখ্যাত অভিনেতা), উমার ফাইয়াদ - ফ্রান্স (সাংবাদিক - আল-জাজিরা) ইয়াসমীন এ্যক্রে - জার্মানি, ব্যাপটিস্ট এ্যন্ড্রে - ফ্রান্স, থিয়াগো এ্যভিলা - ব্রাজিল, পাস্কাল মরিস - ফ্রান্স, ইয়ানিস মাহমাডি - ফ্রান্স, সুয়েব আরডু - টার্কি, সার্জিও ট্যারিবিও - স্পেন, মার্কো ভ্যান রেন্স (নেদারল্যান্ডস), রেভা ওয়ার্ড - ইতালি।

তাঁরা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, "ইজরায়েলের সেনাদের সামনে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।" কিন্তু পিছপা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে টিম-গ্রেটা।

এখন দেখার, যে পশ্চিমা-বিশ্ব দাবি করে তারা মানবাধিকারে বিশ্বাসী, তাদের বক্তব্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যে কোনওরকম কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে তারা নাকি প্রস্তুত। তারা নীরব থাকে নাকি সরব হয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অতএব পশ্চিমা-বিশ্বের মুখ ও মুখোশ উন্মোচিত হবার সময় এসেছে। একটা ছোট্ট জাহাজ, ডজন খানেক মানুষ, পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের কাছে রাখছে হাজার হাজারো প্রশ্ন।

গাজার ধ্বংসাবশেষের খণ্ডচিত্র

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ইসরাইল গাজার উপর অবরোধ চাপিয়ে দেয়। বাকি দুনিয়া থেকে গাজা আলাদা। স্কুল কলেজ, হাসপাতাল, সর্বত্রই বোমা-গুলি চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে তারা। প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে। ত্রাণ নিতে গেলেও বোমা মেরে শিশুদেরও খুন করা হচ্ছে ঠান্ডামাথায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ শুরু হলে ফের যুদ্ধ শুরু হয়। গাজার পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমান যুদ্ধ ২০ মাস ধরে চলছে।  আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইল সম্প্রতি ৮০ দিনের জন্য যে কোনও মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, এই অঞ্চলটিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। এমতাবস্থায় দ্য ম্যাডলিন মূলত শিশুদের খাদ্য, জল পরিশোধনের ওষুধ-সহ কিছু ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই পৌঁছে যাবে সীমান্তে।

Post a Comment

0 Comments