নবান্ন অভিযানের পর কালকের বনধ–ও ব্যর্থ হবে? একটি বিশ্লেষণ

আসিফ রেজা আনসারী

আন্দোলন সফল করতে কতকগুলি বিষয় অপরিহার্য। যেমন, কর্মী–সমর্থক ও দক্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু বঙ্গ–বিজেপির সমর্থক থাকলেও নেতাদের মধ্যে মিল–মহব্বত নেই। পদ ও নেতৃত্ব নিয়ে দলাদলি বহুদিনের। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের রূপরেখা  নিয়েও নিজেদের মধ্যে মতনৈক্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। আগেও এমন হয়েছে। মঙ্গলবারও সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি নবান্ন অভিযান। আগামীকাল রাজ্যজুড়ে যে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে তার সফলতা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়।

কারণ, বিজেপির কর্মসূচিতে বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়ে মানুষের আপত্তি আছে। যদিও বিজেপি সরাসরি স্বীকার করে না যে বাইরের লোক মিটিং–মিছিলের ভীড়ে মিশে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখ  এড়াতে পারে না বহিরাগতরা। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের অভিমুখ ও দাবির সঙ্গে আন্তরিকতা নিয়েও ঢের প্রশ্ন। বিজেপির বড় বড় নেতাদের নামে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। দলের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া বা বড় পদক্ষেপ কিন্তু চোখে পড়ে না। 

সম্প্রতি ব্রিজভূষণ, বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি নিয়েও মহিলাদের মনে নানান প্রশ্ন আছে। বিজেপি  এইসব দিক  নিয়ে মোটেও ভাবিত  নয়। ফলে বাংলার সচেতন মানুষ দেখেশুনেই বিজেপিকে তাদের পছন্দের তালিকা থেকে ব্রাত্য রাখে। এ কথা ঠিক যে রাজ্যপ্রশাসন অপারধীদের শাস্তি দিতে অনেকটা ব্যর্থ কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যের রের্কড মোটেও সন্তোষজনক নয়।

নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু মুসলিম ও  খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার। কবর থেকে তুলে ধর্ষণের ফরমান। দলিত ও মণিপুরীদের উপর লাগাতার অত্যাচার নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নীরব মোদি। ফলে মানুষ এইসব দিক কিন্তু দেখছে। তাই বিজেপিকে যদি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখতে হয় তাহলে সংশোধন করা দরকার। 

এদিকে মঙ্গলবারের কর্মসূচিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসকদল।পশ্চিমবাংলায় বনধ এখন ইতিহাস। আর কর্মদিবস নষ্ট হয় না। বুধবার বিজেপির ডাকা বনধও ব্যর্থ করবে সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ দিন সন্ধ্যায় পুরভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি মেয়র ও বিধায়ক অতীন ঘোষ, বিধায়ক ও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার ও অন্যান্যরা। এ দিনের নবান্ন অভিযানকে বিজেপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। ফিরহাদ বলেন, ছাত্র সমাজের নামে অরাজনৈতিক মানুষকে পাবে বলে আশা করেছিল বিজেপি, কিন্তু মানুষ তাদের কর্মসূচিতে যোগ দেয়নি। সামান্য কিছু মানুষ ও শিল্পাঞ্চলের গুণ্ডাদের দিয়ে অশান্তি ছড়াতে ব্যাপক চেষ্টা করেছে আন্দোলনকারীরা। কিন্তু পুলিশ ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে সব-ধরণের ছক বানচাল করেছে। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করা যায় না। সেকথাও উল্লেখ করেন ফিরহাদ। বামেরাও বিজেপির কর্মসূচিকে ভালো চোখে দেখছে না।

Post a Comment

0 Comments