আসিফ রেজা আনসারী
সম্প্রতি এক মামলায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি অর্থাৎ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল বলে ঘোষণা করেছে আদালত। ওবিসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বহু সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া এইসব জনজাতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে সুযোগ ছিল তা থেকে বঞ্চিত হবেন পিছিয়ে পড়ারা। এ নিয়ে রাজ্যব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্যে ৩০ শতাংশ পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। এরই মধ্যে আবারও মুসলিমদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাড-হক কমিটিতে কোনও মুসলিম প্রতিনিধি না রাখা নিয়ে চারিদিকে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। এরই মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পাঁচটি আঞ্চলিক কমিশনের যে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে, সেখানেও বঞ্চিত করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে।
রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিশনের চেয়ারম্যানের নাম। দেখা যাচ্ছে এসএসসি'র দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ারম্যান হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞানের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মনিকান্ত পারিয়া, পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান রামপুরহাট কলেজের অধ্যাপক ড. অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সৌমী দাস, পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সিধু-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাধনা খাবাস এবং উত্তরাঞ্চলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে পঞ্চাননবর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ালী বসু রায়কে।
এ দিকে রাজ্য সরকারের এরকম মনোভাবকে মুসলিম বিরোধী বলে মনে করছে সংখ্যালঘুদের একাংশ। শিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্তকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলি। শুক্রবার এসএসসি'র চেয়ারম্যান সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এই সম্প্রদায়গুলির শিক্ষিত মানুষজন।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে উত্তরাঞ্চল স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছিলেন অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল ওহাবের মত সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা। বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়ের এমন বহু বিশিষ্ট শিক্ষক বা অধ্যাপক রয়েছেন, তাদের কোনও একজনকে কেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পদে বসানো হলো না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।
শুধু তাই নয় অভিযোগ, মনিকান্ত পারিয়া, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের একজন সহকারী অধ্যাপক। তাঁর নিয়োগ প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি করেছিলেন। তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ফোন করে বহু যোগ্য ক্যান্ডিডেটকে বাদ দিয়ে তাঁর নিয়োগ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যা নিয়ে নিয়োগ হাইকোর্টে কেস এখনও পেন্ডিং রয়েছে। আর শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় জেলে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
0 Comments