ঈদ, বই এবং ওয়াহেদ মির্জার সফল উদ্যোগ

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে বাঙালির বৃহত্তম সর্বজনীন উৎসব ঈদ অনুষ্ঠিত হল বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল৷ ঈদ উৎসবের মাধ্যমে সমাজ নির্মাণের অনুষঙ্গ যাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত ইত্যাদি সমাজের সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের উপকারে আসে৷ ঈদের  ব‍্যাপ্ত সাধনা দুনিয়ার মানুষ ও মাখলুকাতের মঙ্গল চাওয়া৷ ঈদ শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, ঈদ বিশ্বজনীন সামাজিক উৎসব এবং ঈদ একটি চেতনার উৎসব৷ সেই চেতনা দুঃখী পাড়া-পড়শির খোঁজ রাখা, সম্প্রীতি ও খোলামনে কোলাকুলির  সম্পর্কে। উপবাস থাকা কে ইবাদতে পরিণত করার চেতনা৷ আর এই চেতনার উৎস হোক বই৷ একটি বই একশো বন্ধুর সমান৷ তাই ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সাহিত্য সৃষ্টির তাগিদ থেকে বিশেষ ক্যাম্পেইন হল রাজ্যজুড়ে। যার পোশাকি নাম "ঈদ: ঘরে ঘরে বইমেলা"। ক‍্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাঙালির ঘরে ঘরে বই পৌঁছে দেওয়া ছিল মূল উদ্দেশ্য। ঈদের ধর্মীয় মূল‍্যবোধ, নৈতিকতা, সামাজবোধ, সাংস্কৃতিবোধের সঙ্গে অর্থনীতিবোধ যতটুকু তার পরিসর আরও বড় করে তৈরি  করা ও নতুন ভাবনায় সাংস্কৃতিক আখ্যানকে নির্মাণ করতে " ঈদ : ঘরে ঘরে বই মেলা"। সোশ্যাল মিডিয়া এই ক‍্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর নিবাসী  সমাজসেবী ও প্রাবন্ধিক ওয়াহেদ মির্জা। 

রমযান মাসে তিনি হোয়াটস্অ্যাপে ঈদ: ঘরে ঘরে বইমেলা নামে একটি গ্ৰুপ খোলেন৷ এই চিন্তা চেতনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচিত বন্ধু বান্ধব, লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের মধ্যে এই ধারনা ছড়িয়ে দেন৷ একে একে অনেকেই উৎসাহের সঙ্গে যুক্ত হোন  এবং এই বার্তা সবাই মিলে গ্ৰাম বাংলায় ছড়িয়ে দিতে পূর্ণ সহযোগিতা করেন৷ গ্ৰুপে অনেক জাতি ,ধর্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে লেখক ,কবি ,প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক সহ  পাবলিশার্সও যুক্ত হয়ে  মূল‍্যবান বইয়ের সন্ধান সহ কি করে পাওয়া যাবে যোগাযোগ গ্ৰুপে দেন। এর ফলে গ্ৰুপে যুক্ত অনেকেই ঈদ উপলক্ষে উৎসাহের সঙ্গে  বই কেনেন ৷ তার মধ্যে ইসলামী বই ,অ-ইসলামী বই উপনন‍্যাস, বিভিন্ন গবেষণামূলক বই, ছোটদের বই, বাংলা ও ই‌ংরেজী সকল বই ছিল৷ 

উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানান,  ঈদে সকলেই কমবেশি  বাজেটের জামা-কাপড় কিনে থাকেন এবং ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দেন ৷ সেই জামা কাপড়ের সঙ্গে যদি একশো ও দুশো টাকা খরচ করে ঈদি হিসেবে বই তুলে ধরা হয় , নিজের ছেলে মেয়েদের কাছে বা উপহার দেওয়া হয় ,তাহলে জাতির জীবনবোধ ও চিন্তা -চেতনার বিকাশ অন্য মাত্রা এনে দেবে৷ ঈদের ঘ্রানে নতুন বইয়ের সুগন্ধ সঙ্গে সেমাই মিলেমিশে একাকার হোক চেয়েছিলাম। তিনি বলেন,  নতুন জামাকাপড় হোক না হোক, নতুন বই যদি হয় কেমন লাগবে? অনেকেই কম সময়ের মধ্যে বই কেনাকাটা করতে পারেননি, তাঁদের বলেছিলাম পুরোনো বই হাতে নিয়ে ঈদের দিনে " ঈদ : ঘরে ঘরে বইমেলা" ট‍্যাগলাইন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে ঈদের দিন ঠিক ১২টায়। তাতে ব্যপক সাড়া পড়ে বাংলায়। 

জানা গিয়েছে, ঈদের আগের দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার চন্দনেশ্বরে এম রুহুল আমিনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কচি-কাচাদের নিয়ে উম্মুক্ত বইমেলা হয়েছিল। ঈদের পরে হাওড়া জেলার শেখপাড়াতে আবু সাঈদ আহমেদের প্রচেষ্টায় ঈদ মিলনী অনুষ্ঠানে কুরআন শরীফ বিতরণ, বই পড়া ও বই কেনার সঙ্গে ছোট করে বইমেলা হয়৷ এছাড়া বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা, দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, নদিয়া, হুগলি, উত্তরবঙ্গ সহ বাংলায় "ঈদ বইমেলা"চেতনা ছড়িয়ে যায় ৷  এই গ্ৰুপকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে "ঈদ বইমেলা পরিষদ" গড়ে তুলছেন৷ আগামী বছরও ঈদ উপলক্ষে "ঈদ: ঘরে ঘরে বইমেলা" ক‍্যাম্পেইন চলবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মসজিদ, ঈদগাহতে একটি টেবিল নিয়ে হলেও বইমেলা  কি করে করা যায় তার রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান এই  চিন্তা -চেতনা ও উদ‍্যোগের রূপকার ওয়াহেদ মির্জা।

Post a Comment

0 Comments