রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, হিন্দু ধর্ম রক্ষা ও পলাশীর ষড়যন্ত্র: ভোট ময়দানে ইতিহাসের পূনর্নির্মাণ

আসিফ রেজা আনসারী


দেশের ইতিহাসকে পালটে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপিশাসিত সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে যে সমস্ত বিষয় পড়ানো হয় সেখানে বিজ্ঞানের চেয়ে অপবিজ্ঞানেই বেশি জোর। শুধু তাই নয়, ইতিহাসচর্চার নামে সংঘ পরিবারের বানোয়াট কথাবার্তার উপরেই জোর দিচ্ছে সরকার। এ অভিযোগ করছেন দেশের শিক্ষিত মানুষজন। এতদিন ধরে দেশের ইতিহাস, বিশেষ করে গো-বলয়ের ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা হলেও পশ্চিমবাংলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপের মাধ্যমে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অর্থাৎ সেখানকার রাজমাতা দাবি করেছেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাত থেকে হিন্দু ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য ইংরেজদের সাহায্য করেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৎকালীন রাজা। এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। বিশেষ করে কৃষ্ণনগরের রাজমাতার এই অদ্ভুত এবং বানোয়াট মন্তব্যকে সমর্থন করেন নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাই নয়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রশংসাও করেন। 

কিন্তু ইতিহাস বলছে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পেছনে মীরজাফর এবং কৃষ্ণচন্দ্রের বড় ভূমিকা ছিল। তারা ইংরেজদেরকে বাংলা দখলের ছক কষে দিয়েছিল। এই বাংলা দখলের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় ইংরেজদের অপশাসন। আর এই ব্রিটিশদের গোলামী থেকে দেশকে মুক্ত করতে হাজার হাজার মানুষকে শহিদ হতে হয়েছে। সেসব ইতিহাস। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুসলিম শাসকদের ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার যে সংঘ পরিবারের প্রচেষ্টা তাকে বাহবা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এই ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। 

কৃষ্ণনগর এর মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রকৃতপক্ষে তোলাবাজ লর্ড ক্লাইভকে বাংলায় এনেছিলেন। এ কথা সবাই জানেন। আর এই বিষয়টিকে আবার উসকে দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ব্রাত্য বসু। সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য বসু বলেন, কৃষ্ণচন্দ্র সাহায্য না করলে ব্রিটিশরা আসতো না। উপনিবেশই হতো না। তিনি আরও বলেন, একটা বিষয় সকলের জেনে রাখা উচিত কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্ব একদিকে মুর্শিদাবাদ ও অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ছিল। বাংলায় বর্গী আক্রমণ হলে সে সময় কৃষ্ণচন্দ্র ট্যাক্স দিতে পারেননি আলীবর্দী খাঁ তাকে বন্দি করেও মুক্তি দেন। পলাশীর যুদ্ধের সময় সিরাজকে সরাতে মীরজাফরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। রাতের অন্ধকারে মিটিং হয়েছিল তাদের। সে সময় কৃষ্ণচন্দ্রই বলেছিলেন এখানে হিন্দু মুসলিম দিয়ে হবে না ইংরেজদেরকে বসাতে হবে। আর এভাবেই তোলাবাজ ক্লাইভকে বাংলায় প্রবেশের রাস্তা করে দিয়েছিলেন। একসময় একসময় ক্লাইভ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। মুসলিম শাসক আলিবর্গী খাঁ কৃষ্ণচন্দ্রকে ক্ষমা করে দিলেও ব্রিটিশ ক্লাইভ কৃষ্ণচন্দ্রকে ক্ষমা করেনি। এটাই সত্যি। অমৃতা রায় রাজ পরিবারের মেয়ে হতেই পারেন। কিন্তু উনি বাঙালিদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলে গিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ব্রাত্য বসু। 

আসলে কথায় আছে ইতিহাস ফিরে আসে। ঠিক প্রধানমন্ত্রীর ফোনের পর বাংলার ইতিহাস এখন চর্চায়। কৃষ্ণনগরের রাজমাতার মন্তব্যের পরেই তৃণমূল দলের তরফে বলা হয়েছিল, মুখ হয়তো পালটে গিয়েছে কিন্তু জমিদারি এখনও রয়ে গিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এইসব 'বিশ্বাসঘাতক' বাংলা বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান করার কথাও বলে তৃণমূল। ইতিহাস বলছে ১৭৫৭ সালে মীরজাফর, জগত শেঠ এবং উমি চাঁদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। বিশ্বাসঘাতকের মত নিজেকে ব্রিটিশদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তার ফলে বাংলা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল ব্রিটিশরা।

Post a Comment

0 Comments