নাগরিকত্বের পরীক্ষায় ফেলে ভূমিসন্তানদের আশ্রয় কাড়তে চাইছে বিজেপি: প্রদীপ–সুজন

আসিফ রেজা আনসারী

স্বাধীনতার সময় নানা কারণে দেশভাগ হয়েছে।তারপর সীমান্তের এপার থেকে বেশ কিছু মানুষ পাকিস্তানে গিয়েছেন, একইভাবে পাকিস্তান থেকে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে।তারপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষজন এদেশে শুধু বসবাসই করছে না, সবরকম নাগরিক সুবিধা ভোগও করছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব দেওয়ার নাম করে নয়া সিএএ নামে আইন এনেছে সরকার। তা নিয়েই উঠছে নানান প্রশ্ন, শুধু তাই নয় আবেদনকারীদের ধর্মীয় পরিচয় নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পিছনেও চক্রান্ত দেখছে বিরোধীরা। এবার সিএএ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সুজন চক্রবর্তী। বুধবার সংবিধান বাঁচাও মঞ্চের আহ্বানে ছিল নাগরিক কনভেনশন। দলিত নেতা সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাসের আহ্বানে মৌলালী যুবকেন্দ্রের সেই কনভেনশনে বক্তব্য রাখার সময় সকলের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ও কালাকানুন বাতিল করার দাবি করেন। সেই দাবিকে সমর্থন করে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান প্রদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, সুখবিলাশ বর্মা ও মুহাম্মদ কামরুজ্জামানরা।

প্রদীপ ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, বিজেপি যা করছে সেখান থেকে স্পষ্ট নাগরিকত্ব তাদের কাছে সেকেন্ডারি বিষয়, আসলে রাজনীতিটাই আসল লক্ষ্য। যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করছেন তাদেরকে নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বাধ্য করাকে চূড়ান্ত ধরনের 'ছ্যাঁচড়ামো' বলে উল্লেখ করেন তিনি। পুরো বিষয়টিকে মানুষের সঙ্গে চূড়ান্ত ধরনের অপমান বলে উল্লেখ করে কংগ্রেসের ইশতেহাতে তা তুলে ধরার কথাও বলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।

একই অভিযোগ করেন ড. সুখবিলাস বর্মা। প্রাক্তন এই আমলার যুক্তি পাঁচ বছর আগে আইন পাস হলেও সম্প্রতি যে রুল জারি হয়েছে তা নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। ধর্মীয় কারণে কেউ উৎপীড়নের শিকার হয়েছেন এটা কোনও দেশই মানবে না, ফলে সিএএ আসলে 'ধাপ্পাবাজি'। এ দিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, পুরোটাই রাজনীতি হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের সংস্কৃতির মিল এবং মানুষের নাড়ির টান রয়েছে। অতএব কাঁটাতার দিয়ে কখনও মানুষকে আলাদা করা যায় না। যারা উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে এসেছেন সবাইকে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে। ২০০৩ সালে নাগরিকত্বের আইনে যে বড় পরিবর্তন এসেছিল সেই আইন বাতিল করারও দাবি তোলেন তিনি। পুরনো আইনে দেশে জন্মগ্রহণ করলেই নাগরিকত্ব থাকবে সে দাবির পক্ষে সওয়াল করেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি আরও বলেন, সরকার সমস্ত নথি চাইছে তা কারও জোগাড় করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে গরিব মানুষ তা পারবে না। আর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেই প্রমাণ হয় যে আবেদনকারী নাগরিক নন। ফলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ থাকে। এভাবে ফাঁদ পাতছে বিজেপি। সবাইকে লড়াই করারও আহ্বান জানান বাম নেতা।

সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, অবিভক্ত ভারতের নাগরিকদের সহজ শর্তে নাগরিকত্ব দেওয়ার পরিবর্তে নাগরিকত্ব আইনের নামে উদ্বাস্তু মানুষদের সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রতারণা করছে। এটা অমানবিক এই প্রতারণা করার অধিকার মোদি সরকারের নেই। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দরকার। এই আন্দোলনের পাশে মুসলিম সমাজের মানুষ বরাবর সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং আগামীতেও থাকবে। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন আরাফাত আলি, মধু দত্ত প্রমুখ।সকলেই নিঃশর্ত নাগরিকত্বের স্বীকৃতির কথা বলেন।

(সৌজন্য পুবের কলম) 

Post a Comment

0 Comments