মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন, পরীক্ষা এবং বিজেপি 'চলে আসবে' গল্প: একটি বিকল্প বিশ্লেষণ

আসিফ রেজা আনসারী

সাপ্তাহিক পত্রিকা নতুন গতির মাসান্তিক  সাহিত্য পত্রিকা ২০২৩ সালের এপ্রিল সংখ্যায়  সম্পাদকীয় নিবন্ধে  লেখা হয়েছে  'আগামী ৫০ বছরেও  মুসলমানদের সরকারি চাকরির হার বাড়বে না'। এ নিয়ে অবশ্য  বিশ্লেষণা করেছেন সম্পাদক। উল্লেখ করেছেন, ২০০৪-৫ সালের  ঘটনার কথা। বিশেষ করে সাচার কমিটি গঠন, রিপোর্ট এবং পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের কথা। আব্দুস সাত্তারকে দিয়ে বেশ কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন  তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিশেষ করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন করে হজ হাউস তৈরি করা এবং মাদ্রাসাগুলিতে  শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক সার্ভিস কমিশন গঠন। এই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠিত হওয়ার পর  রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হাইমাদ্রাসা বা সিনিয়র মাদ্রাসাগুলোতে  শিক্ষক নিয়োগের একটি সুন্দর কাঠামো তৈরি হয়।  তার আগে অবশ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমেই  নিয়োগ হচ্ছিল। তারও আগে  সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা পরিচালন কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। এসব গেল অতীত কথা।



২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটল। বামফ্রন্টের পতনের পর ক্ষমতায় এল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর এসএসসি অর্থাৎ স্কুল সার্ভিস কমিশন, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থাগুলো এখন যেন ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে। একদিকে যেমন তারা নিয়োগ করতে পারছে না, অন্যদিকে দুই একটা নিয়োগ হয়েছে  তাতে যে পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা  দেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। বিশেষ করে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা আদালতে খরচ হচ্ছে। এরই মধ্যে আবার নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন।


এমনিতেই বেশ কয়েক বছর ধরে কোনও পরীক্ষা নেয়নি, নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের। এবার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ঠিক করেছে তাদের এবারের টেট হবে  রবিবার ২৮ তারিখ।  কিন্তু এই দিনে  পুলিশ সার্ভিস-এর একটি পরীক্ষা রয়েছে।  যা বহু আগে থেকে চূড়ান্ত। হঠাৎ করে একই দিনে তাহলে কেন দুটো পরীক্ষা ফেলা হচ্ছে? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পরীক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার পুলিশ সার্ভিসে সংখ্যালঘুদের  নিয়োগ করতে চায় না। তাই একই দিনে দুটো পরীক্ষা ফেলেছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, তড়িঘড়ি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করে  আসলে পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে রাজ্য।  এমনিতেই সামনে লোকসভার ভোট, তার আগে সেঅর্থে নিয়োগ করতেও পারবেনা। এই নিয়োগ বা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, আর তার আগে মানুষকে দেখাতে হবে যে সরকার নিয়োগ করতে চায়, সেই কারণে এই লোক দেখানো পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। একটি সংগঠন মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা  বয়কটের ডাক দিয়েছে।  বিভিন্ন সংগঠনের তরফে  নানান অনুরোধ করা হলেও  নিজেদের অবস্থানে অনড় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। আর এখানেই সব প্রশ্ন তুলছে, কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে।


অনেকেই দাবি করছেন, এই মুহূর্তে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নেওয়ার কোন কথা ছিল না।  হঠাৎ করে লোক দেখাতে দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। বহু সংখ্যক পরীক্ষার্থীর আবেদনপত্র বাতিল করা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন নানান সংগঠন। আর এইসব নানান প্রশ্ন এবং অভিযোগের মধ্যেই  রবিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা। এখন দেখার  নিয়োগ হবে নাকি আবারও বোকা বানানো হবে পরীক্ষার্থীদের।

অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, 'বিজেপি চলে আসবে, এনআরসি চালু হবে,' এইসব গাঁজাখুরি গল্প চালিয়ে একশ্রেণির মুসলিম নেতা সেই আরএসএস লাইনের পথেই মুসলিমদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আসলে সরকার চাইছে না যে সংখ্যালঘুদের কিছু হোক। আর তাই তাদের বানানো কথায় পা দিচ্ছে সংখ্যালঘু সংগঠন ও নেতারা। 'বিজেপি চলে আসবে' এই হুজুক তুলে সরকারের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করছেন কেউ কেউ।

Post a Comment

0 Comments