শিল্পী উস্তাদ বনাম পলিটিক্যাল উস্তাদ
-সুদীপ সেলিম
উস্তাদ রশিদ খান আজকে নেই। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর গান সব ঘরানা থেকে নিয়েছেন এবং সেই অর্থে শুনলাম বাংলার এক পণ্ডিত বলেছেন যে, 'উনি আমারও সেই অর্থে হাতে তৈরি ছেলে।' এতে অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শুরু করেছেন। আসলে গান কিভাবে তৈরি হয় বিশেষ করে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ঘরানাতে এবং কিভাবে একজন শিল্পী সেই ঘরানাকে বজায় রেখে অন্য ঘর থেকে তাঁর ভালো বৈশিষ্ট্যগুলো আত্তীকরণের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ এবং উজ্জ্বল করে তোলেন, এই প্রক্রিয়াটা হঠাৎ করে গানের ভক্ত হয়ে যাওয়া লোকেদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
![]() |
ছবি সংগ্রহ লেখকের |
উত্তর ভারতীয় মার্গ সংগীতের কয়েকটি প্রধান ঘরানার অন্যতম হল রামপুর ঘরানা, যেটার একজন উজ্জ্বল প্রতিনিধি ছিলেন উস্তাদ রশিদ খান। এছাড়া কিরানা ঘরানা আছে গোয়ালিয়ার ঘরনা আছে বিখ্যাত পাতিয়ালা ঘরানাও আছে। যারা আপনারা গুলাম আলি থেকে অজয় চক্রবর্তীর পর্যন্ত সকলের গান শুনে মোহিত হন ।এছাড়া আছে বাংলার নিজস্ব ঘরানা বিষ্ণুপুরী ঘরানা। বেশ কয়েকটি ঘর এর নাম হয়তো আমি এই মুহূর্তে ভুলে গেলাম। কিন্তু বিষ্ণুপুর ঘরানার শ্রেষ্ঠ উস্তাদের নাম স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবং তার উস্তাদ যদু ভট্ট। তবে কি এইসব ঘরানার শিল্পীরা অন্য ঘরানা থেকে বা অন্য কোথাও থেকে সংগীত নিজের মধ্যে আত্তীকরণ করতেন না? রবি কি শুধুই যদুবাবুর গান গাইতেন? না।আসলে তা নয়।
অবশ্যই করতেন। আজও করে থাকেন। অন্তত যারা গান-বাজনাটা করেন তারা এটা বুঝবেন। এর জন্য একটু শোনা এবং শেখার অভ্যাস করতে হবে। এটা জটিল বিষয় একদিনে বুঝে ফেলার বিষয় নয়। তাই পণ্ডিত যখন বলেন যে উস্তাদ রশিদ খান তো আমারই অন্যতম হাতে তৈরি ছেলে। তা শুনে অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলেও, তা তাদের দিকেই অনেক বেশি করে ফিরে আসে। কারণ গোটা ব্যাপারটা তারা বোঝেনা এটাই প্রমাণ হয়।
মূর্খ লোকেদের একটা খুব সুবিধা হল তারা তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয় তারা মূর্খ। তাদের আলাদা করে সার্টিফিকেট লাগেনা। গতকাল পর্যন্ত যে রশিদ খান ছিলেন তিনি ছিলেন মার্গ সংগীতের একজন অসাধারণ শিল্পী।যাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলা গানে বা বাংলা ফিল্মের গানে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা নাকি হিট করেছিল। সেটা ভালো হয়েছিল তার পক্ষে কি খারাপ হয়েছিল সেটাও তর্কের বিষয়। যাই হোক কালকে সন্ধ্যেবেলার পর থেকে রশিদ খান সম্পূর্ণ পলিটিক্যাল একটি বিষয়। অতএব এই পলিটিক্যাল বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। রশিদবাবুর কাজ তো রয়ে গেল, এখন কিছুদিন তোলাবাজদের ওনাকে নিয়ে কপচাতে দিন, কিছুদিন পরে সব চুপ করে যাবে।
এটাই পণ্ডিত উস্তাদ এবং বাকি সংগীত পিপাসু এবং সংগীত রসিক মানুষদের অনুরোধ করব, যেমন রবীন্দ্রনাথ একটি পলিটিক্যাল কবি এখন। তাই তার গান গাইনা।
0 Comments