শূন্যপদে নিয়োগ চেয়ে প্রধানশিক্ষক সংগঠনের রাজ্য বার্ষিক সাধারণসভা দিঘাতে

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ শুক্রবার থেকে নিউ দিঘাতে, দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাগৃহ জাহাজ বাড়িতে শুরু হয় তিনদিনের রাজ্যের হাইস্কুল এবং হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক শিক্ষিকাগণের সংগঠন 'অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস্ (এএসএফএইচএম) এর চতুর্থ রাজ্য বার্ষিক সাধারণসভা। রাজ্যের ২৩ টি জেলা থেকে ৬০০জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন ঐ সভায়। পরিবেশ ও সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষাগত এবং পেশাগত দাবিকে সামনে রেখে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সহ সমুদ্রের পাশের রাস্তা দিয়ে নিউ দিঘাজুড়ে পদযাত্রা চলে। মিছিল শেষে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, শহিদবেদীতে মাল্যদান এবং শোকজ্ঞাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক সাধারণসভার উদ্বোধন হয়। এরপর জাহাজ বাড়ি সভাগৃহে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন রাজ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সংকট নেমে এসেছে তার থেকে মুক্তির পথ যদি শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা দফতর অবিলম্বে না গ্রহণ করে তাহলে আরও সংকট বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বসাধারণের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাতে বিশাল অংশের ছাত্রছাত্রী অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। স্কুলছুট বাড়ছে। গ্রামীণ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী নেই।কোনও নৈশ প্রহরী নেই। ঝাড়ুদার নেই। শিক্ষা বহির্ভূত কাজের চাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিক যেন রেশন দোকানে পরিণত হয়েছে।সেই চাপে রাজ্যের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাগণ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতিতে শাসকদলের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঢুকে পড়ছেন। বিদ্যালয় প্রধানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। সভায় রাজ্যের হাই স্কুল এবং হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের জ্বলন্ত সমস্যাবলি, পেশাগত দাবি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর তথা রাজ্য সরকারের করণীয় কর্তব্য বিষয়ক আলোচনা শুরু হলো। এই মুহূর্তে আরও যে জ্বলন্ত সমস্যাবলি আলোচিত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল শূন্য পদে অবিলম্বে স্বচ্ছতার সঙ্গে শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী নিয়োগ, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা বহির্ভূত কাজের বাইরে রাখতে হবে, রাজ্যের হাই স্কুল এবং হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের বেতন বঞ্চনার নিরসন ঘটাতে হব।


আরও দাবি উঠেছে, উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে উন্নীত এবং কর্মরত কয়েক শত প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাগণের একটি ইনক্রিমেন্ট কেটে নেওয়া বন্ধ করে প্রাপ্য বেতন দিতে হবে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষকগণের সাম্মানিক মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা আজও পর্যন্ত তারা পাচ্ছেন না- তার সুরাহা করতে হবে, হাজার দিনেরও বেশি গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসে থাকা এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের সুবিচার দিতে হবে, কেন্দ্রীয় হারে রাজ্যের প্রাথমিক, হাইস্কুল এবং হাই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীগণের ডি এ প্রদান করতে হবে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীর এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় রাজ্যের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং হাই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মীগণের জন্য অবিলম্বে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম চালু করতে হবে, বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং উন্নয়নের জন্য রাজ্য শিক্ষা দফতরকে দায়িত্ব নিতে হবে, প্রত্যেকটি বিদ্যালয় এর জন্য ঝাড়ুদার এবং নৈশ প্রহরী নিয়োগ করতে হবে, বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করতে হবে, প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণকে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এবং মাদ্রাসা বোর্ডে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কমিটি তৈরি করে পরিচালনার ভার অর্পণ করতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত স্তরের অনলাইন সিস্টেম চালু করতে হবে, সুন্দরবন- জঙ্গলমহল- মুর্শিদাবাদের ব্রিকফিল্ড এবং উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকার নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মীগণকে বিশেষ ভাতা প্রদান করতে হবে, পর্ষদ সংসদ এবং মাদ্রাসা বোর্ডকে প্রকৃত ক্ষমতা দিয়ে আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত সিলেবাস তৈরি করতে হবে,ইত্যাদি। তেইশটি জেলা থেকে প্রতি জেলার দুজন করে মোট ৪৬ জন প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকা প্রতিনিধি তিন দিন ধরে শিক্ষার মানোন্নয়ন, পেশাগত সমস্যা ও সমাধানে তাঁদের বক্তব্য পেশ করছেন। সভা পরিচালনা করছেন রাজ্য সভাপতি ড. হরিদাস ঘটকের নেতৃত্বে গঠিত সভাপতিমন্ডলী।আজ রবিবার সভা শেষ হচ্ছে। 

Post a Comment

0 Comments