ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক বাংলা,এবার মাতৃভাষার দাবিতে পথে নামবে উর্দুভাষীরা

আসিফ রেজা আনসারী


ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক মানুষকে নিজের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার অধিকার দিয়েছে। শুধু তাই নয়, একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রত্যেকটি ভাষাভাষী এবং জাতি-ধর্মের মানুষের ভাষা এবং সংস্কৃতির অধিকারকে প্রদান করা। আর ঠিক এই কারণেই আমাদের দেশ নানা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। আর এটা একটি সাংবিধানিক অধিকার। কোনও ব্যক্তিকে কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম, ভাষা কিংবা সামাজিক অবস্থানের জন্য সরকারি চাকুরি কিংবা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তারপরও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত পরীক্ষায় এবার বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের। অভিযোগ করছেন উর্দুভাষী মানুষরা। তাদের অভিযোগ, তারা উর্দু মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছেন আর আজকে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বাংলা বাধ্যতামূলক হয়েছে। সুযোগ পাচ্ছেন নেপালি ভাষাভাষী মানুষরা। তাহলে উর্দু কোথায় যাবে? একথা বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেললেন বঙ্গবাসী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হায়দার হাসান কাসেমী। তিনি বক্তব্যের মাঝে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন, 'সরকার আমার মায়ের ভাষাটাও কেড়ে নেবে!'


উর্দুভাষী ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও বিকল্প সুযোগ না দিয়ে সরকার কেন বাংলা ভাষাকে আবশ্যিক করছে। এ প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তারপরে তিনি জানান, উর্দু এবং হিন্দির মত যে সমস্ত ভাষাভাষীর মানুষ এই ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন হোক। আর তার কথাতেই মাতৃভাষা বাঁচাও কমিটির নাম করে একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের প্রস্তাব পাস হয় রবিবার শামসুল হুদা রোডের এক সভা ঘরে। বিশিষ্ট সাংবাদিক শামা আফরোজের আহ্বানে নাগরিক সভায় এই মঞ্চ গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন উর্দু ভাষাভাষীর বহু বিশিষ্টজন।

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী মানজার জামিল, নাদিম সিদ্দিকী, আফতাব আলম, আয়েশা মনির, আসলাম হোসেন, শেখ রাজা সাহেব প্রমুখ। এ দিন মানজার জামিল অভিযোগ  করেন উর্দু ভাষার যে সমস্ত স্কুল কলকাতায় রয়েছে সেগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। কোনও স্কুলেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তারপরও কোনরকমে সেই সব স্কুলগুলো টিকে রয়েছে। আর আজ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় উর্দু ভাষার পরীক্ষার্থীদের সুযোগকে তুলে দিয়ে সরকার এই ভাষাভাষীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকল। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাবি করে সংখ্যালঘুদের নানান কাজ হয়ে গিয়েছে। আসলে এই সরকার মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজি করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ডক্টর অমর্ত্য সেনের প্রতিষ্ঠান প্রতীচী ফাউন্ডেশনের অন্যতম গবেষক সাবির আহমেদের একটি রিপোর্ট উল্লেখ করেন। তার কথায়, সাচার কমিটির পর আদতে এই তৃণমূল সরকারের আমলে মুসলমানদের পরিস্থিতি বদলায়নি, এ কথা স্পষ্ট হয়েছে গবেষণায়। তিনি উল্লেখ করেন বিজেপি চলে আসবে এই ভয় দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। 

একইভাবে উর্দু তুলে দেওয়ার বিরোধিতায় সরব হন নাদিম সিদ্দিকী। এই সমাজকর্মীর বক্তব্য, সরকারিভাবে উর্দু দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি আজও। উর্দু ভাষাভাষী অঞ্চলে উর্দুতে কেউ চিঠি লিখলে থানায় বা অন্যান্য জায়গায় গৃহীত হয় না, কারণ সেখানে উর্দু পড়ার মতো মানুষ নেই। এতদিন পরেও কেন তার বাস্তবায়ন হল, না প্রশ্ন তোলেন তিনি। একইভাবে উর্দু মিডিয়াম স্কুলগুলোই শিক্ষক শূন্যতার কথা তুলে ধরেন বিশিষ্ট শিক্ষক আফতাব আলম। তিনি উল্লেখ করেন, উর্দু ভাষা মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে অথচ উর্দু মিডিয়াম স্কুলের জন্য শিক্ষক নেই। 

সভার আয়োজক জানান আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন হবে, প্রয়োজনে আদালতে পর্যন্ত যাওয়া হবে বলে। এ দিনের সভার আহ্বায়ক সাংবাদিক শামা আফরোজ বেঙ্গল মিররকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি উর্দু ভাষার এই সাংবিধানিক অধিকার আদায় করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। তার কথায়, সরকার যদি উর্দু ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিই দিয়ে থাকে তাহলে চাকরির পরীক্ষায় তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন তার জবাব চাই। কিছুদিনের মধ্যে একটি নতুন কমিটি গঠন করা হবে এবং সেই কমিটির মাধ্যমে আগামী আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হবে বলে উল্লেখ করেন শামা আফরোজ।

Post a Comment

0 Comments