রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্রের ছোয়াঁয়, শত বাধা পেরিয়ে কলেজের চৌকাঠে পা সোনালী–আমিনাদের

আসিফ রেজা আনসারী

 

তাদের কেউ সামান্য রোজগেরে পরিবারের, কেউবা উত্তরণের রাস্তা জানতো না। এমনই ঘরের ছেলেমেয়েরা স্কুলের পড়া শেষ করে পা রাখছে কলেজের চৌকাঠে। শুধু তাই নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য সহপাঠক্রমিক কাজেও নজর কাড়ছে আমিনা–সোনালীরা।আর সবটাই সম্ভব হয়েছে তাদের বাবা–ভমায়ের অদম্য ইচ্ছা আর রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্রের সহায়তায়।

প্রসঙ্গত, বেগম রোকেয়া ছিলেন নারীশিক্ষা আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তার সংগ্রামকে স্মরণ করে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন সমাজকর্মী কস্তুরী বসু ও তার বন্ধুরা। যেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি শেখানো হয় হাতের নানান কাজ। নাটকচর্চা থেকে শুরু করে আত্মনির্ভরতার পাঠও দেওয়া হয়। মূলত সুবিধাবঞ্চিত ঘরের পড়ুয়ারাই এখানকার ছাত্রছাত্রী। সঠিক গাইডেন্সের অভাবে যাদের পড়াশোনার রাস্তাটা সোজা পথে চলতে পারে না, তাদেরই জীবন গড়ার পাঠ দেয় রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্র।

এই বছর এখানকার বেশকিছু পড়ুয়া পাড়ি দিল কলেজে। রোকেয়ার উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ ২০২৩ এর ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হয়েছে।সংস্থার তরফে বলা হচ্ছে, বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ওদের এই আগামীর দিকে যাত্রা। একটা শ্রেণিবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা, হিংসায় উন্মত্ত সময়, আর্থিক অনটন, বাবা মায়েদের জীবন সংগ্রাম রয়েছে,তবু ওরা স্বপ্ন দেখছে। সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাঁচবে না। সবাই মিলে বেঁধে বেঁধে থাকবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে আর চোখকান খুলে জানবে দেশদুনিয়াকে। রোকেয়ার পড়ুয়ারাও বলছে, গোটা দুনিয়াকে ওরা দেখবে। আর খুশি তাদের বাবা–মায়েরাও।

Students of Rokeya sikshakendra

রোকেয়ার প্রিয়া, তৃষা ও আমিনারা কলেজেও নিস্বতার ছাপ রাখতে চায়। জানা গিয়েছে, প্রিয়া দাস হিস্ট্রি অনার্স নিয়ে উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজে ভর্তি হয়েছে।তার বাবা সেলুনে কাজ করেন। মা গৃহবধূ।অন্যদিকে তৃষা বিশ্বাস সেই কলেজেই ভূগোল অনার্সে ভর্তি হয়েছে।তার বাবা বাবা রঙের মিস্ত্রী।মা ধুপকাঠি ও সেলাইয়ের ট্রেনিং নিচ্ছেন।একইভাবে নির্মাণ শ্রমিক বাবা ও রান্নার কাজে যুক্ত মায়ের সন্তান তরিসা মণ্ডল বিদ্যাসাগর কলেজে ফিজিওলজি অনার্স পড়বে।এদের মধ্যে আরও যারা রয়েছে যেমন– সুমনার বাবা রিকশা চালক, মা বাড়ি বাড়ি শাড়ি বিক্রি করেন। সে পড়বে ফিজিওলজি অনার্স। কলেজের নাম বিদ্যাসাগর কলেজ ফর উইমেন। বঙ্গবাসী ইভনিং কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স পড়বে ভবতোষ মণ্ডল। বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়বে আংশিক সময়ের কেয়ারটেকারের ছেলে রুদ্রদীপ সরকার। অন্যদিকে রানীও পড়বে যোগমায়া দেবী কলেজে। তার বাবা–মা অসংগঠিত শ্রমিক। রেশমী, সোনালী, সুদীপার বাবা–মায়েরা সবাই অসংগঠিত শ্রমিক। তারাও জানবে বিশ্ব–জাহানকে। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুস কলেজে হিস্ট্রি মেজর বিএ জেনারেল কোর্সে ভর্তি হয়েছে আমিনা খাতুনসামান্য ফলবিক্রতার মেয়েও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। মৌসুমী ও মধুসূদনের বাবারা রিকশাচালক। তাদেরও মাথা উচু করে জগত দেখার রাস্তা খুলে দিয়েছে রোকেয়া। সবাই এখানে মানবিক মর্যাদার সঙ্গে পড়াশোনা করে।

Post a Comment

0 Comments