১৮৩০ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতায় চালু হয়েছিল বাস পরিষেবা, এখন কী পরিস্থিতি? কলম ধরলেন টিটো সাহা

টিটো সাহা

১৮৩০ সালে আজকের দিনে প্রথম বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল। তখন ঘোড়ায় টানা বাস দিয়ে প্রথম পরিষেবা চালু হয়েছিল ব্যারাকপুর থেকে এসপ্ল্যানেড রুটৈ। পরে অবশ্য বিভিন্ন কারণে এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে চালু হয় ঘোড়ায় টানা ট্রাম। ১৯২০ সালে পুনরায় বাস পরিষেবা চালু হয়। এই বাসের যাত্রাপথ ছিল "খিদিরপুর থেকে এসপ্ল্যানেড"। এরপর ধীরে ধীরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রুটের বাস। দীর্ঘ ১৯২ বছর ধরে বিভিন্ন ঝড় জলের মধ্যে দিয়ে আজও আমাদের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন মাধ্যম আমার আপনার প্রিয় কলকাতার বাস। এই জন্য আমরা সকল বাস মালিক ও বাস শ্রমিক সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাই, সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

কিন্তু এখন প্রশ্ন একটাই আমাদের ভবিষ্যত কী? শহরের বিভিন্ন নাগরিকদের মতে এখন বাস পরিষেবা আর আগের মতো নেই, যেখানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের অন্যান্য শহরের বাস পরিষেবা উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে সেখানে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে আমাদের কলকাতা। এখানে প্রায় প্রথম থেকেই দুই ধরনের বাস পরিষেবা দিয়ে এসেছে সরকারি বাস ও বেসরকারি বাস। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই দুই ধরনের পরিষেবাই ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে বিভিন্ন মহলের বারংবার নেওয়া বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত। 


২০০৯ সালে যখন সমস্ত ১৫ বছরের পুরনো বাস বাতিল হয় তখন থেকেই প্রায় শুরু হয় এই দুঃসময়ের। তারপরেও পরিস্থিতি যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছিল তখন একে একে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা যার মধ্যে অন্যতম ছিল জ্বালানি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি এবং সেই তুলনায় সঠিক ভাড়ার বিন্যাস। এছাড়াও বিভিন্ন বাস রুটের প্রায় একই রুটে বর্তমানে চলাচল করে অটো ও টোটো যা প্রায় একদিক থেকে বাস পরিষেবাকে ধীরে ধীরে শেষের পথে নিয়ে যাচ্ছে। 

করোনার করাল থাবা থামিয়ে দিয়েছে বহু বাস এর দৌড়। ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট গুলো ডাইনোসর এর মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে কমজোরি মালিকদের ওপর। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রয় করে পরিত্রান লাভ করেছেন আর কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন বাস ব্যাবসা।

সরকারের কাছে তাই আমাদের বিনীত অনুরোধ যে ভবিষ্যতে কলকাতার ও বিভিন্ন জেলার গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে বাস পরিষেবার ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা এখন থেকে না করলে হয়তো আর কয়েক বছর পর কলকাতার ট্রামের মতো হয়তো আমরা কলকাতার বাস কেও হারিয়ে ফেলবো। 

আশা করি আপনাদের সকলের ভালোবাসায় বাস পরিষেবা থেকে যাবে কলকাতা শহরের সাথে সাথে বাংলার প্রতিটি জেলায়, আরো শত শত বছর।

সবাই ভালো থাকবেন।

(টিটো সাহা, সাধারণ সম্পাদক, সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস)

Post a Comment

0 Comments