সমাজকর্মী সাদিকুলের প্রচেষ্টায় বন্দিদশা কাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে মুক্তি পেলেন মানিক

আসিফ রেজা আনসারী

ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি। সেখানে গিয়ে তাঁর জেল হয়। তারপর কেটে গিয়েছে তিন-তিনটি বছর। অবশেষে মঙ্গলবার মুক্তি পেলেন সেই মানিক দেবনাথ। তাঁর এই মুক্তির কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজকর্মী সাদিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, মানিক দেবনাথের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার অন্তর্গত ধরন্ডা গ্রামে। যখন আটক হন তখন বয়স ছিল ৩০। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। চিকিৎসাও চলছিল। একদিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঘোরাঘুরির সময় তাঁকে তুলে নিয়ে যায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তারপর কেটে কেটে গিয়েছে তিন বছর। অনেক ঘোরাঘুরি করেও সুরাহা হচ্ছিল না। এরই মধ্যে সাদিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মানিকের বাবা বিনোদ দেবনাথের।
জানা গিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরের মিলন বর্মন-এর মাধ্যমে মানিক দেবনাথের বাংলাদেশ জেলে আটকে থাকার খবর পান সমাজকর্মী সাদিকুল ইসলাম। তিনি খবর পেয়েইবিদেশমন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক ও একজন আইএফএস অফিসারকে ঘটনাটি জানান। তারপরই বাংলাদেশে আটক মানিক দেবনাথের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। তারপর কোনও আপটেড ছিল না। এ নিয়ে সাদিকুল ফের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের চিফ এবং নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজির সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করেন যাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সাদিকুল আরও জানান, বিএসএফ-এর আধিকারিকরা সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখার কথা বলেন। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক জয়েন্ট সেক্রেটারিকে ব্যাপারটা জানানো হয় যাতে বিএসএফ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের চিফ আইপিএস রাজীব রঞ্জন ভার্মার নজরে আসে। তিনিও খোঁজখবর নিতে থাকেন। এ দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের স্পেশাল সেক্রেটারি অরুণিমা দে-র কাছেও খবর পৌঁছয়। তিনি ভারতীয় দূতাবাস, কনস্যুলেট, বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে কথা বলেন এবংসাদিকুলকে সেই আপডেট দেন। তারপর সমস্ত কাগজপত্র তৈরি হয়। এ দিন, ১৩ জুলাই, মঙ্গলবার সকাল ১১টার সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্টে মানিককে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লোকজন বিএসএফের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেন।
এদিন আরও দু’জনকে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ। জানা গিয়েছে, দিনজপুরেরই ইসলামপুরের বাসিন্দা তাজু মুহাম্মদ ও মাস্টার একেল নামে দু’জনকে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতেপাঠানো হয়েছে।
ছেলের বাড়ি ফেরা নিয়ে বিনোদ দেবনাথ বলেন, আমরা খুব সাধারণ মানুষ। ছেলে একটু মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। সীমান্ত এলাকা থেকে ছেলেকে আটক করা হয়। আমরা জানতে পারি, বাংলাদেশে ১৩ মাসের জেল ছেলের। কিন্তু তার পরেও ছেলেকে ফেরানো হচ্ছিল না। সাদিকুল ও যাঁরা ছেলেকে ফেরানোর বন্দোবস্ত করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তাঁর আর্জি, ছেলেকে আটক করার সময় বাইক, মোবাইল ও অন্যান্য যেসব জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল তা যেন ফেরত দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সৌজন্যে: দৈনিক পুবের কলম 

Post a Comment

0 Comments