বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ১৯১৯ সালের আজকের দিনেই পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে জালিয়ানওয়ালাবাগে ঘটেছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সেদিন ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আজ তার ১০১তম বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে শহীদদের শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সকালেই টুইট করে শ্রদ্ধার্ঘ জানান। এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'আজ জলিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০১তম বার্ষিকী। সেই ভয়াবহ দিনে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই উপলক্ষে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যিনি এই গণহত্যার প্রতিবাদে তাঁর নাইটহুড ত্যাগ করেন।'
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “জালিয়ানওয়ালাবাগে আজকের দিনে যাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আমি সেই সব শহীদদের প্রণাম জানাই। তাঁদের সাহস এবং আত্মবলিদানকে আমরা কখনই ভুলবো না। তাঁদের বীরত্ব ভারতবাসীকে যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা যোগাবে।”
উল্লেখ্য, ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষ সম্পূর্ণরূপে ইংরেজ শাসনের অধীনে আসে। কিন্তু মানুষ এই শাসনকে মেনে নিতে পারছিলেন না। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ভারতের উদীয়মান ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে এই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসনাধীনে থেকেই ন্যায়বিচার এবং স্বায়ত্তশাসন লাভ। কিন্তু ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবী মেনে নেয়া হয়নি। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি ক্ষুদ্র এশীয় শক্তি জাপানের কাছে পরাজিত হয়। একই সময়ে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জারের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ায় এশিয়া এবং আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলো দখল করে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই ফল ছিল ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে জার্মানি ইংল্যান্ড তথা মিত্রবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিলো। ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে। এই কথায় ভারতীয়রা যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এসময় তাকে বেকার করে নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অন্যদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ভারতবাসী জনমানসে ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা হয়। মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইনের মাধ্যমে শান্ত করার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু গোল বাধল রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে। ইংরেজরা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনের জন্য নির্যাতনমূলক আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। এই আইনের অধীনে বিনা কারণে গ্রেপ্তার, অন্তরীন ও সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণহীন বিচার ও বন্দীত্বের বেপরোয়া পদক্ষেপ গৃহীত হয়। গান্ধিজি তখন অহিংস এবং সত্যাগ্রহ তথা রক্তপাতহীন আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এই সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধিজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এপ্রিলের ১৩ তারিখ দুজন রাজনৈতিক নেতাকে অমৃতসর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পটভূমিতেই বলতে হয় হত্যাকাণ্ডের আবহ তৈরি হয়েছিল।
জানা যায়, ১৩ এপ্রিল ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০-এর মত "বিদ্রোহীকে" হত্যা করা করা হয়েছিল। আর এতে খরচ হয়েছিল ১৬৫০ রাউণ্ড গুলি। বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়।জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়ানক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপের প্রকাশ হয়ে পরে.সরকার জেনারেল ডায়ারের কাজকে সমার্থন করে. কিন্তু এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা বিশ্ব শিহরিত হয়. দেশে-বিদেশে সর্বত্র সরকারের নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধযায় বলেছেন যে, "এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর, দক্ষিণ,পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে।" জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া "নাইট" উপাধি ত্যাগ করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করে; কংগ্রেস নেতা সি.এফ.এন্ডুজ এই ঘটনাকে 'কসাইখানার গণহত্যার' সমতুল্য বলে নিন্দা করেছেন।
তথ্য সহায়তা: Wiki, PIB, ToI, Amritsar 1919 Book by Kim A. Wagner, The Case That Shook the Empire: One Man's Fight for the Truth about the Jallianwala Bagh Massacre- Book by Pushpa Palat and Raghu Palat
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “জালিয়ানওয়ালাবাগে আজকের দিনে যাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আমি সেই সব শহীদদের প্রণাম জানাই। তাঁদের সাহস এবং আত্মবলিদানকে আমরা কখনই ভুলবো না। তাঁদের বীরত্ব ভারতবাসীকে যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা যোগাবে।”
![]() |
শিল্পীর আঁচড়ে হত্যাযজ্ঞ।ছবি- আইরিশ ঠাইমস্ |
উল্লেখ্য, ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষ সম্পূর্ণরূপে ইংরেজ শাসনের অধীনে আসে। কিন্তু মানুষ এই শাসনকে মেনে নিতে পারছিলেন না। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ভারতের উদীয়মান ধনী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে এই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসনাধীনে থেকেই ন্যায়বিচার এবং স্বায়ত্তশাসন লাভ। কিন্তু ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবী মেনে নেয়া হয়নি। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি ক্ষুদ্র এশীয় শক্তি জাপানের কাছে পরাজিত হয়। একই সময়ে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জারের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ায় এশিয়া এবং আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলো দখল করে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই ফল ছিল ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে জার্মানি ইংল্যান্ড তথা মিত্রবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিলো। ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে। এই কথায় ভারতীয়রা যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এসময় তাকে বেকার করে নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অন্যদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ভারতবাসী জনমানসে ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা হয়। মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইনের মাধ্যমে শান্ত করার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু গোল বাধল রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে। ইংরেজরা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনের জন্য নির্যাতনমূলক আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। এই আইনের অধীনে বিনা কারণে গ্রেপ্তার, অন্তরীন ও সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণহীন বিচার ও বন্দীত্বের বেপরোয়া পদক্ষেপ গৃহীত হয়। গান্ধিজি তখন অহিংস এবং সত্যাগ্রহ তথা রক্তপাতহীন আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এই সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধিজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এপ্রিলের ১৩ তারিখ দুজন রাজনৈতিক নেতাকে অমৃতসর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পটভূমিতেই বলতে হয় হত্যাকাণ্ডের আবহ তৈরি হয়েছিল।
জানা যায়, ১৩ এপ্রিল ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০-এর মত "বিদ্রোহীকে" হত্যা করা করা হয়েছিল। আর এতে খরচ হয়েছিল ১৬৫০ রাউণ্ড গুলি। বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়।জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়ানক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপের প্রকাশ হয়ে পরে.সরকার জেনারেল ডায়ারের কাজকে সমার্থন করে. কিন্তু এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা বিশ্ব শিহরিত হয়. দেশে-বিদেশে সর্বত্র সরকারের নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধযায় বলেছেন যে, "এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর, দক্ষিণ,পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে।" জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া "নাইট" উপাধি ত্যাগ করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করে; কংগ্রেস নেতা সি.এফ.এন্ডুজ এই ঘটনাকে 'কসাইখানার গণহত্যার' সমতুল্য বলে নিন্দা করেছেন।
তথ্য সহায়তা: Wiki, PIB, ToI, Amritsar 1919 Book by Kim A. Wagner, The Case That Shook the Empire: One Man's Fight for the Truth about the Jallianwala Bagh Massacre- Book by Pushpa Palat and Raghu Palat
0 Comments