হিংসাত্মক ঘটনার স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাত? কী বলছেন মুসলিম নেতৃত্ব!

নিজস্ব প্রতিবেদন: ক্যাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হিংসার জেরে যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের শীর্ষনেতারা। রবিবার রাতে কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এই হিংসাত্মক কার্যকলাপের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মুসলিম শীর্ষনেতাদের ধারণা যেভাবে গত দু'দিন ধরে বিভিন্ন রেল স্টেশনে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। মুসলিম শীর্ষনেতাদের আশংঙ্কা ক্যাব নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে তা বানচাল করতেই এই ক্যাব বিরোধী আন্দোলনে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। ক্যাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে বা আন্দোলনকারীদের অপদস্ত করতেই সুপরিকল্পিতভাবে হিংসাত্মক কাজে পারদর্শী তথা দুষ্কৃতিকারীদের কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে। যে ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা মুসলিমদের কোনও সংগঠনের নেতায় সমর্থন করেনি এবং করবেও না। এইসঙ্গে মুসলিম শীর্ষনেতাদের আরও বক্তব্য– যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে তাদের কড়া হাতে দমন করা দরকার। মুসলিম শীর্ষনেতাদের সাফ কথা, ক্যাবের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ আন্দোলন অবশ্যই গড়ে তুলতে চান। তবে তা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবং শান্তিপূর্ণ পথে। কোনও ভাবেই এই ধরনের হিংসাত্মক পথে নয়।
Photo: Sandip Saha

এ দিন বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশকে যে পথে নিয়ে যাচ্ছেন– তাতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হওয়াই স্বাভাবিক। তাই বলে হিংসাত্মক পথ কখনওই কাম্য নয়। রাজ্যবাসীর কাছে  মুসলিম শীর্ষনেতৃত্ব শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলনের আবেদন জানান। এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামি হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আবদুর রফিক, সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য মাওলানা আবু তালিব রহমানী, আহলে হাদিসের প্রতিনিধি মাওনালা ইরফান শের, সমাজকর্মী আশরাফ আলি কাশেমী, বেঙ্গল এগেইনস্ট এনআরসি অ্যান্ড ক্যাবের আহ্বায়ক রাফে সিদ্দিকী, সমাজকর্মী মুহাম্মদ সুজাউদ্দীন প্রমুখ।
এ দিন মাওনালা আবু তালিব রহমানী বলেন– আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কেউ কেউ গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন– আন্দোলন হোক তবে কখনওই হিংসাত্মক পথে নয়। ক্যাবের বিরোধিতাকারীদের উত্তর কোরিয়া যেতে বলা প্রসঙ্গে মেঘালয়ের রাজ্যপালকেও তিনি কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন– ভারতীয় মুসলিমরা মোদি বা অমিত শাহকে দেখে এখানে থাকেন না। আমরা গান্ধি– নেহরু– মাওলানা আবুল কালাম ও আম্বেদকরকে দেখে আছি। কারও যদি গান্ধি-আম্বেদকরকে পছন্দ না হয়– তবে তিনিই অন্য কোথাও চলে যান।
অন্যদিকে রাজ্য জামায়াতে ইসলামি হিন্দের সভাপতি মাওলানা আবদুর রফিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিদেশি বলে কটাক্ষ করে বলেন– বিদেশ থেকে আসা একজন ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিকদের তাড়াতে চায়! এর পরেই তিনি আন্দোলনের সমর্থন করে বলেন– আমি আন্দোলনকে সমর্থন করি। তবে আন্দোলন যেন হিংসাত্মক না হয়। রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন– হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতিকারী লোক আছে তাঁরাই এমনটা করছেন। তাঁর আরও অভিযোগ– দেশের মূল সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে দিতেই এনআরসি– ক্যাব বা ৩৭০ ধারার মতো খেলা খেলছে বিজেপি। তাঁদের সঙ্গে একই সুরে আশরাফ আলি কাশেমী ও রাফে সিদ্দিকী সহ অন্যান্যরাও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করেন। মাওনালা ইরফান শের বলেন– সরকার এমন একটা আইন পাস করেছে যা বৈষম্যমূলক। তাঁর কথায়– এটা শুধু মুসলিমদেরই নয় হিন্দুদেরও বিপদে ফেলবে। যাঁরা বহুদিন ধরে বসবাস করে আসছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে বিদেশি বলা হবে। এতদিন ধরে বসবাসকারীরা কী তবে বিদেশি? প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মুসলিম সংগঠনের নেতৃত্ব বলেন– দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার লড়াইয়ে এ পর্যন্ত মুসলিমরাই বেশি প্রতিবাদ করছেন এটা ঠিকই– তবে গণতন্ত্র ও অখণ্ডতা রক্ষাকামী সকলেরই পথে নামা উচিত। পাশাপাশি প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করুক এমনটাও দাবি করেন মুসলিম নেতৃত্ব।

Post a Comment

0 Comments