মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে সমাজসেবা! ‘চা’ দোকানি প্রিয়াঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদন:
মানুষের শখ অনেক রকমই হয়ে থাকে। কেউ ঘরে রাখেন পোষ্য কুকুর-বিড়াল তো কেউ রঙিন মাছের অ্যাকিউরিয়াম। তাই বলে মোটা টাকার চাকরি ছেড়ে দেওয়া? দেশের আর্থিক মন্দার জেরে যখন সরকারি বা বেসরকারি চাকরির আকাল– তখনই এমন আজবকাণ্ড ঘটিয়েছেন মধ্যমগ্রামের প্রিয়াঙ্কা দে। এক সন্তানের মা প্রিয়াঙ্কা হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার পর পেয়েছিলেন পাঁচতারা হোটেলের চাকরি। সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কিছুতেই মন টিকছিল না। ব্যস– সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন। বাড়ির লোকের বিরাগভাজনও হয়েছিলেন। তবে পাশে পেয়েছিলেন স্বামীকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার প্রিয়াঙ্কা এখন চা-দোকানি!
ছবি: সায়ন দাসগুপ্ত

সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে প্রিয়াঙ্কা দে মধ্যমগ্রাম স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের টিকিট কাউন্টারে পাশে ছোট্ট একটি অস্থায়ী গুমটি নিয়ে বসেন রোজ। কয়েকশো মানুষ আসেন ‘চা’ খেতে। দিনের পর দিন চা প্রেমীদের ভিড় বাড়ছে প্রিয়াঙ্কার চা দোকানে। আর হবে নাইবা কেন! এখানকার চায়ে পাওয়া যায় চকোলেট– ম্যাঙ্গো বা আপেলের স্বাদ। তাও মাত্র দশ থেকে তিরিশ টাকার মধ্যেই। এ ছাড়াও স্ট্রবেরি– পি-নাট– লস্যি ও কেশর মিলিয়ে প্রায় সাত রকম চা পাওয়া যায়।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। উত্তর শহরতলির মধ্যমগ্রাম গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন ভালো নম্বর নিয়ে। পরে সুুভাষ বোস ইন্সটিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টে স্নাতক হন। চাকরিও পান একটি হোটেলে। তাজ বা গ্রেট-ইস্টার্নের মতো দেশের একের পর এক নামিদামি হোটেলে চাকরি করেছেন। তারপরেও ছাড়লেন? প্রিয়াঙ্কার কথায়– ‘আমি আমার মতো করে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।’ তা বলে চায়ের দোকান! প্রিয়াঙ্কা বলেন– আমি চেয়েছিলাম স্বাধীন হয়ে কাজ করতে। অফিসের সময় নিয়ে কচকচানি আর গতে বাধা নিয়ম আমার বড্ড পরাধীন বলে মনে হত। তাই নিজের মতো করে চেয়েছিলাম কিছু একটা করতে। হঠাৎই মাথায় বুদ্ধি এল নানান স্বাদের ‘চা’-এর দোকান দেব। মমতার ‘চপ’ না মোদির ‘চা’ কোথায় পেলেন প্রেরণা? -আমি অবশ্যই দু’জনকেই শ্রদ্ধা করি। অন্তত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার জন্য। কোনও কিছুই তো খারাপ নয়। আমি প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা মাসের চাকরি ছেড়েছি এটা ভেবেই অনেকেই আমাকে পাগল বলতে পারেন। তবে আমি মনে করি স্বাধীন উদ্যোগ গড়ে উঠলে কিছুটা হলেও বেকারত্ব সমাধান হতে পারে। সে যতই ছোট হোক– কাজকে সম্মান করে দ্বিধা সরিয়ে কিছু একটা চেষ্টা করতেই পারেন। প্রসঙ্গত– প্রিয়াঙ্কা তাঁর কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে রেলযাত্রী মেয়েদের নানান অসুবিধা নিয়ে আন্দোলনও করেন। শিয়ালদা সহ অন্যান্য স্টেশনে শুয়ে থাকা বা পথবাসীদদের জামা-কাপড় থেকে শুরু করে আহারের ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। প্রিয়াঙ্কার কথায়– অনাথ আশ্রমে গিয়ে বই-খাতা থেকে পেন-পেনশিল দেওয়া– ইত্যাদির কাজ করা ও নিজের মতো করে সমাজসেবার জন্য স্বাধীনতা দরকার ছিল তাই তিনি কাজ ছেড়ে সামান্য চা দোকানি হয়েছেন। সঙ্গী হয়েছেন পড়শি শিপ্রা ও বন্ধু সোমাল।

Post a Comment

0 Comments