শিশুদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব

শিশু দিবস ও কিছু কথা:
বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন অভিনেত্রী জয়িতা মাইতি: সারা দেশ জুড়েই আজ বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালিত হচ্ছে শিশু দিবস। আমরা আমাদের পরিবার, পরিজন ও নিজেদের ছোট্ট খুদেটির হাতে তুলে দিচ্ছি কিছু উপহার। স্কুল বা পাড়ার ক্লাবে শিশুর উপযোগী কিছু অনুষ্ঠান, আর খাওয়া-দাওয়া।
আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করি, যে দেশে শিশুদের স্কুলের পথ ভুলে কারখানার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দিন গুজরান করতে হয়। হোটেলের বাসন মেজে কেটে যায় শৈশব; একটু খাবারের জন্য সারা দিন উদয়াস্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরও ঠিক মতো খাওয়া জোটে না। জোটে প্রহার! শিশুমন বিকশিত হওয়ার আগেই বিনষ্ট হয়। অকালে হারিয়ে যায় শৈশব, সেখানে এই আড়ম্বর কতটা যুক্তিসঙ্গত? নিজেদের প্রশ্ন করা দরকার। তাছাড়া যে শিশুর আপাতদৃষ্টিতে একটা সুস্থ পরিবার আছে তারাও কি সবাই সুস্থভাবে বড় হতে পারছে? আমরা বড্ড বেশী যান্ত্রিক হয়ে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদেরও যান্ত্রিক করে তুলছি না কি? হ্যাঁ, চাপিয়ে দিচ্ছি নিজেদের পাহাড় প্রমাণ অলীক কল্পনার দায়ভার। 'এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে' শিশুদের যেনো মতামতের কোন মূল্য নেই! মূল্য নেই ভালোলাগা ও খারাপ লাগার। টেকনোলজি সর্বস্ব ঘুনধরা সমাজ ব্যবস্থা কোন দিকে এগোচ্ছে? সারা বছর আরও একটু যত্ন, আরও একটু মানবিক ভাবে যদি আমরা শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারি, তবেই তো সার্থক শিশু দিবস।
Image Credit: Indrajit Mondal
ঘরে-বাইরে রয়েছে অ্যাবিউস (নির্যাতন বা অপব্যবহার)-এর আতঙ্ক। এই বিষাক্ত কীটের হাত থেকে কবে মুক্ত হবে এ সমাজ? প্রশ্ন আছেই।তাছাড়া, আমরা জীবনের ইঁদুর দৌড়ের শামিল করে তুলছি শিশুদের। নিজেদের যন্ত্রণা, নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছি শিশুদের ওপর। আর তাদের প্রাপ্য স্নেহ থেকে বঞ্চিত করছি প্রত্যহ। কোথাও গিয়ে এই অপ্রাপ্তি তাদের জীবনবিমুখ ও বিপথগামী করে তুলছে।  
উত্তোরণের পথ-আমাদের শপথ:
আমরা প্রত্যেকেই যদি আরও খানিকটা দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারি এবং আরও মানবিক অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারি তবেই আজকের বীজ প্রকৃত মহীরুহ হয়ে উঠবে। আমরা পাবো আদর্শ সমাজ। যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি, দিতে পারি ভালো মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা, তবেই সার্থকতা শিশু দিবসের। এবং একইসঙ্গে সবাই মিলে পাশে দাঁড়াতে পারি শিশুদের, যাদের জীবন থেকে শৈশব হারিয়ে গেছে, সেই কচিকাঁচাদের মুখের হাসি ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারি। আমরা চেষ্টা করতে পারি তাদের জীবনমুখী করে তোলার। তবেই গড়ে উঠবে নতুন পৃথিবী। নবালোকে ঝলমল করবে আমাদের সমাজ এবং প্রকৃতঅর্থে সার্থক হয়ে উঠবে শিশু দিবসের প্রাক্কাল। এগোবে দেশও।

Post a Comment

0 Comments