পৌরাণিক ইতিহাস: আঘোরী/অঘোরী (পর্ব- ১)

ধর্মের অন্ধকার পৃষ্ঠায় থাকা একটি সাধক গোষ্ঠী, "আঘোরী"র গল্প***** 
বিশেষ প্রতিবেদন, সৌহার্দ্য সেন: আজকের দিনে ইন্টারনেট অতি প্রয়োজনীয় একটি বস্তু; খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান এর পরেই আচ্ছে দিন, তারপর ইন্টারনেটের স্থান। কিন্তু এই ইন্টারনেটের একটি অন্ধকার দিক আছে, ডার্ক ওয়েব, সাধারণ ইউজাররা ওখানে যান না সাধারণত। তেমনি ধর্মেও একটি অন্ধকার দিক আছে, আর এখানেই থাকেন আঘোরীরা এরা প্রধানত তন্ত্র দেহতত্ত্বের মাধ্যমে ষড়রিপুর উর্দ্ধে যাওয়ার জন্য সাধনা করেন। ডার্ক ওয়েব নিয়ে যেমন ভুল ধারণা রয়েছে, আঘারী নিয়েও তেমন আছেতো বিগবস মহাদেব আর গুরু দানিকেনের নাম নিয়ে শুরু করা যাক
১. ধর্ম: আঘোরীরা হিন্দু না, এরা ধর্মের উর্দ্ধে। যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষ আঘোরী হতে পারে, প্রথমে হিন্দু দশমহাবিদ্যা, তারপর বর্জ্রযান বৌদ্ধ তান্ত্রিক প্রথা, তারপর জৈন তান্ত্রিক প্রথায় এঁদের সাধনা চলে। গোমাংস খাওয়ার ফলে প্রথমেই এঁরা হিন্দু ধর্ম চ্যুত হন
Image Credit: Arpan Bhattacharya
২. সাধু: যদিও সাধনা>সাধক থেকে "সাধু" শব্দটির জন্ম, কিন্তু আজকের দিনে "সাধু" বলতে "ভালো" বা "ভদ্র" বোঝায়, তাই আঘোরী দের সাধু না বলাই ভালো
৩. নরমাংস ভক্ষণ: আঘোরী সাধনার চরম পর্যায় হচ্ছে "শব ভক্ষণ"; ফাইনাল পরীক্ষা বলতে পারেন। একবার খেতে হয়, তবে নরমাংস বাধ্যতামূলক নয়। শবসাধনার সময় সুরা শবমাংশ ভক্ষণ বাধ্যতামূলক। বাকি সময় আমাদের মতোই সাধারণ খাবার খান এঁরা
৪. নিষ্ঠুর শব সাধনা: হ্যাঁ, আঘোরী রা শব সাধনা করেন, মৃতদেহ কাটাছেঁড়াও করেন। সম্প্রতি বেশ কিছু "সভ্য" বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠী এটিকে নিষ্ঠুর এবং "অসভ্য" আখ্যা দিয়েছেন
Image Credit: Anurag Gupta
এখানে বলে রাখতে হয়, আঘোরী তন্ত্র দেহতত্ত্বের একটি উচ্চ পর্যায়, এরা আত্মা দেহের মৃত্যু পরবর্তী অবস্থান নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন
নিষ্ঠুরতার প্রশ্ন তুললে তো বলতেই হয়, জীবনবিজ্ঞান ক্লাসের ব্যাঙ থেকে শুরু করে, পাভলভের কুকুর থেকে, রাশিয়ার লাইকা পর্যন্ত সবাই "সভ্য" জগতের "নিষ্ঠুরতার" শিকার। আর "অসভ্য" যদি বলতেই হয়, তবে তো আগন্তুকে বলাই হয়েছে। "দুটো পরমাণু বোমা ফেলে দুটো শহর কে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার চেয়েও নিষ্ঠুর?!"  হ্যাঁ, নিউট্রন বোমার আবিষ্কারের পর মার্কিন বৈজ্ঞানিক স্যামুয়েল কোহেন "ভারত-চীন সীমান্তের কিছু আঘোরী লামা" থেকে প্রাপ্ত রহস্যজনক একটি ইকে ক্রেডিট দেন।
উল্লেখ্য, এই আঘোরী রাই আগলে রেখেছিল বাৎস্যায়নের কামসূত্র, এরাই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কে চর্যাপদের ঠিকানা বলেন চর্যাপদের প্রথম লেখক লুইপাদ আঘোরীতন্ত্রে সিদ্ধ ছিলেন।
*****চলবে*****

Post a Comment

0 Comments