বিভিন্ন ধর্মে রোযা বা উপবাসের বিধান

সংকলনে- আসিফ রেজা আনসারী

আজ থেকেই ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমযান মাস শুরু। প্রসঙ্গত, আরবি ক্যালেন্ডার চন্দ্রমাস হিসাবে গণনা করা হয়। রমযান মানেই রোযার মাস। একমাস যাবৎ মুসলিমরা রোযা রাখেন৷ রোযা মানে দিনভর পানাহারমুক্ত থাকা। ঊষাকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া ও পান করা বারণ থাকে। কিন্তু শুধু কি মুসলিমরা রোযা রাখেন, নাকি অন্যান্য ধর্মেও এমন উপবাসের বিধান আছে৷ আসুন পরিচিত হই কয়েকটি প্রধানতমধর্মের উপবাসের সঙ্গে... 

ইসলাম ধর্মঃ- ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একমাস ধরে রোযা রাখার বিধান রয়েছে। প্রসঙ্গত রমযান মাসের ২৯ বা ৩০ দিন (চাঁদের গণনা এমনই হয়) রোযা রাখেন মুসলিমরা৷ এছাড়াও পবিত্র শবে বরাত বা রমযানের পূর্ববর্তী মাসের ১৫ তারিখ, শবে মেরাজ–সহ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৪ /১৫/১৬ যেকোনো দুইদিন রোযা রাখার বিধান আছে৷ রোযার সময় মুসলিমরা ঊষাকাল বা ফজর থেকে সূর্যাস্ত বা মাগরিব পর্যন্ত পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন মুসলিমরা। বলা হয় আত্মশুদ্ধির জন্য রোযা। 

ইহুদি ধর্মঃ- ইয়োম কিপ্পুর বা প্রায়শ্চিত্তের দিন হল ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র দিন৷ ইহুদি ক্যালেন্ডারের তেশরেই মাসের ১০ তারিখ এই রোযা রাখা হয়। এ দিন ২৫ ঘণ্টা ধরে উপবাস ও প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন ইহুদি ধর্মের অনুসারীরা৷ এছাড়া আরও অন্যান্য ছয়দিন রোযা রাখার বিধান আছে ইহুদি ধর্মে৷রোযায় পানাহার মুক্ত থাকেন ইহুদিরা। 

বৌদ্ধ ধর্মঃ- অন্যান্য ধর্মের মতো বৌদ্ধ ধর্মেও উপবাসের বিধান আছে৷ প্রসঙ্গত তারা পূর্ণিমার দিনগুলোতে ও অন্য ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোতে উপবাস করে থাকেন।

খ্রিস্টান ধর্মঃ- ইসলাম ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের মিল আছে। তারা সকলেই সিমেটিক ধর্মের অন্তর্গত। খ্রিস্টানরা অ্যাশ ওয়েনেসডে ও গুড ফ্রাইডে’র দিন রোযা বা উপবাস পালন করে৷ এছাড়াও ইস্টার সানডে’র আগের প্রায় ৪০ দিন তাঁরা শুক্রবারগুলোতে মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন৷ 

হিন্দু ধর্মঃ- হিন্দু ধর্মেও রোযা বা উপবাসের বিধান আছে। বেদের বিধান যে, চন্দ্রমাসের একাদশীর দিন পুরোটাই উপবাস করতে হবে৷ শুধু জলপান করা যাবে৷ আহার করা নিষিদ্ধ। সে হিসাবে মাসে দু’বার এই উপবাসের রেওয়াজ আছে৷ সাধারণত মেয়েরা উপবাস পালন করেন সন্তান–সহ অন্যান্যদের মঙ্গল কামনা করে। আরও কিছু সময়ে রোযা বা উপবাস করা হয় হিন্দু ধর্মে। 

মর্মনঃ- খ্রিস্টিয় সংস্কারবাদী ল্যাটার ডে সেন্ট ম্যুভমেন্টের সদস্যদের বলা হয় মর্মন৷ তাঁরাও প্রতি মাসের প্রথম রোববার রোযা রাখেন৷ অন্যদিকে বাহা’ই নামে একটি গোষ্ঠী রোযা রাখেন। প্রসঙ্গত, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে বাহাউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ধর্ম বাহা-র অনুসারীরা তাঁদের পঞ্জিকার ১৯তম মাসে (২ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত) রোযা রাখেন৷ এছাড়াও ইয়াজিদি নামে আর একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, মধ্যপ্রাচ্যে যাদের মূলত বসবাস তারও ডিসেম্বর মাসে তিন দিন রোযা রাখেন৷ 

জৈন ধর্মের রোযা: জৈনদের ধর্মীয় অনুশাসনে রোযার কথা রয়েছে। সেই রোযার অবশ্য ভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন– ১. চৌবিহার উপবাস যাতে পরবর্তী দিনের সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনও প্রকার খাবার বা পানি গ্রহণ না করা। ২. ত্রিবিহার উপবাস– যেখানে কোনও খাওয়া যায় না কিন্তু ফুটানো পানি পান করা যায়।

এছাড়াও, উত্তর ভারতের হিন্দুরা বৃহস্পতিবার উপবাস পালন করেন। তারা মূলত বৃহস্পতি মহাদেবের পূজা করেন। অনেক হিন্দু মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিন যেমন- একাদশী বা পূর্ণিমাতে উপবাস বা রোযা করেন। ধর্মীয় উৎসব যেমন- মহাশিবরাত্রীতে অধিকাংশ হিন্দু উপবাস পালন করেন। নবরাত্রিতেও উপবাস হয়। ভারত বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের বিবাহিত হিন্দু মহিলারা স্বামীর সুস্বাস্থ্য, উন্নতি ও দীর্ঘায়ূ কামনায় উপবাস পালন করেন।


Photo credit: cultural awareness International

Post a Comment

0 Comments