বাড়ির পথে রওনা দিয়ে নিখোঁজ কলেজ ছাত্র, দিনাজপুর থেকে কলকাতা হন্যে পরিবার

বিশেষ প্রতিবেদন, বেঙ্গল মিররঃ আব্বা আপনি কেমন আছেন? শরীর ভালো তো! হ্যাঁ এটাই শেষ কথা। বঙ্গবাসী কলেজের সাইকোলজি অনার্সের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া তোফাজ্জুল হক (২২) শেষ বারের মত এই কথাই বলেছিল বাবার সাথে। গত তিন তারিখ নিখোঁজ হওয়ার আগে ফোনে সব শেষ বারের মত কথা হয় বাবা ছেলের। এদিকে সেদিনই বাড়ি যাচ্ছি বলে দমদমের হস্টেল থেকে বন্ধুকে বলে বেরিয়ে যায় সে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে বাড়ি যাওয়ার কথা। রাত ন'টা নাগাদ মেসের বন্ধুকে ফোন করে জানায় যে বসার সিট পেয়েছে সকালে বাড়ি পৌঁছে কথা হবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফোনে করলেও কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার কথা বলেনি নিখোঁজ তোফাজ্জুল হক।
           বাড়ির কেউ মোটেও জানত না যে তোফাজ্জুল হস্টেলে নেই, যদি না সে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ পাঠাত। প্রসঙ্গত গত সাত তারিখ জামাই বাবু নাজমুল হককে একটি অস্বাভাবিক মেসেজ পাঠায়। সেখানে তোফাজ্জুল লেখে, "আত্মহত্যা থেকে বাঁচতে আধ্যাত্মিক শক্তির কাছে মাথা নত করতে আমি ঘর ছাড়ছি।" এই বার্তা পাওয়ার পর খোঁজ-খবর শুরু হয় চারিদিকে। দিনাজপুর থেকে কলকাতা সব যায়গায় খোঁজা হয়েছে। না কোন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না দেখে অবশেষে গত এগারো তারিখ দমদম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পরিবার। দমদম থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
        উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের উত্তর শংকরপুরে বাড়ি নিখোঁজ পড়ুয়ার। থাকত দমদমের বাগজলা খাল সংলগ্ন ঘোষ পাড়ার অঙ্কিত হস্টেলে। সামান্য কৃষিজমির উপর নির্ভরশীল মধ্যবিত্ত আবদুর রাজ্জাকের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় মেয়ে ইংরাজি স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া। বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি। আর তোফাজ্জুল ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও সে প্রথম বর্ষে পড়ত। পড়াশোনায় মেধাবী ছেলের কোনো অভাব রাখেনি বাবা । ছেলে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক, এটাই চেয়েছিলে রাজ্জাক সাহেব। কিন্তু এই দূর্ঘটনা সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল, বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন তিনি। আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বাড়িতেও কান্নার রোল।
       এদিকে একমাত্র ছেলে নিখোঁজ হওয়ায় আতঙ্কিত বাবা আবদুর রাজ্জাক ছেলের সন্ধানে গতকাল বৃহস্পতিবার ভবানী ভবনে সিআইডির মিসিং পার্সন ব্যুরোর দ্বারস্থ হন। সিআইডির তরফে সবদিক খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments