আসিফ রেজা আনসারী
শুধু পার্লামেন্ট নয়, এবার কলকাতা পুরনিগমের বৈঠকে উঠল ‘বঙ্কিম’ প্রসঙ্গ। মাসিক অধিবেশনে ‘বঙ্কিমদা’ বনাম ‘মিনি পাকিস্তান’ নিয়ে জোর তরজা হয়। বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষের কথায় মেজাজ হারিয়ে সব পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দেমাতারাম’ নিয়ে সংসদে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘বঙ্কিমদা’ বলেছিলেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরনিগমের মাসিক অধিবেশনে এ বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। সে বিষয়ে বলতে গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিজেপি ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সাভারকরের ভূমিকা উত্থাপন করেন।
এ দিকে ফিরহাদের বক্তব্য নিয়ে বলতে ওঠেন বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, আপনারা অভয়া নিয়ে কিছু বলেন না। আপনি মিনি পাকিস্তানের কথা বলেন। এ কথা শুনে রেগে যান ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, আপনি যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন বা ভিডিয়ো দেখাতে পারেন তাহলে আমি আমার সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেব।
এক সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুর-অধিবেশন। বিজেপি ও তৃণমূল কাউন্সিলরদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তৃণমূল কাউন্সিলরের দিকে তেড়ে যান বিজেপি কাউন্সিলররা। শেষে চেয়ারপার্সন মালা রায় হস্তক্ষেপ করেন। তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর প্রস্তাব দেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রবীন্দ্রনাথ এবং বাংলার সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপরে এই সাংßৃñতিক আক্রমণের বিরুদ্ধে কলকাতা পুরনিগমের সব জনপ্রতিনিধি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নিন্দা জানাক এবং এ দিনের এই অধিবেশনের মাধ্যমে সেই নিন্দা প্রস্তাবকে নথিভুক্তকরণের আবেদন জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সঞ্জীবনী মন্ত্র ছিল বন্দেমাতরম। অথচ সেই স্লোগানেই নেমে এসেছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি বন্দেমাতরমের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করে আরেকবার বাঙালির অস্মিতার উপরে আঘাত হানা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই প্রসঙ্গে এমনকি রবীন্দ্রনাথকে অবধি কুৎসিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
বিজেপিকে আক্রমণ করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, একটা পার্টি অসভ্য বর্বর। ওদের সঙ্গে মিশেই নীতীশ কুমারের এই হাল। কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গ বা অসৎ সঙ্গে নরকবাস। কোথাও যদি বাইটে দেখায় আমি মিনি পাকিস্তান কথাটা বলেছি, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। চ্যালেঞ্জ নিলাম। পাকিস্তানের কাগজে কী বেরিয়েছে তার দায় আমার নয়। পাকিস্তানের কাগজ বিজেপি পার্টি অফিসে আসে। আমাদের কাছে আসে না। আমরা জানি না।

0 Comments