বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৌলবাদী শক্তি সংখ্যালঘু, মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করছে। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, রন্তিদেব সেনগুপ্ত, পার্থ ব্যানার্জি, ড. সিদ্ধার্থ গুপ্ত, নাজমুল হক, সুমন ভট্টাচার্য প্রমুখ। সকলেই বাংলাদেশের ঘটনার নিন্দা করেন। কঠোর শাস্তির দাবি জানান এবং শান্তি ফেরাতে সরকারে পপদক্ষেপ দাবি করেন।
এক বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ তার জন্মলগ্ন থেকেই সমস্ত রকম মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী। মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্য নিয়েই গত তিন বছর ধরে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ পথ চলছে। আগামী দিনেও সেই লক্ষ্যেই আমরা পথ চলব।
![]() |
| সাংবাদিক সম্মেলনে গণমঞ্চ নেতৃত্ব। |
সংগঠনের বক্তব্য, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আমাদের উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কিত করেছে। ওই দেশে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি যেভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ গণতন্ত্রকামী অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনা মানুষদের ওপর আঘাত হেনেছে, তা যে কোনো গণতন্ত্রপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক মানুষকেই ব্যথিত করবে। আশঙ্কিত করে তুলবে। বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ছায়ানট, উদিচীর মতো রাবীন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করেছে। অবাধে তাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। সংবাদপত্রের অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। দীপু দাস নামে সেদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবক এবং আয়েষা আক্তার নামে একটি শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের বাসস্থান এবারও তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। বাঙালির রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলকে নিশানা করেছে তারা। যে স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিতর দিয়ে বাঙালির অস্মিতা প্রকাশ পেয়েছিল, বাংলাদেশে আজ সেই ইতিহাসকেই বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তি মুছে ফেলতে সচেষ্ট হয়েছে। শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই নয়, সেদেশে ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল মুক্তমনা মানুষদের ওপরও প্রতিনিয়ত আঘাত হানা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই নৃশংস মৌলবাদী তাণ্ডবকে আমরা ধিক্কার জানাই। তবে আশার কথা এই যে, ওই দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মুক্তমনা প্রগতিশীল লেখক শিল্পীরা এবং সাধারণ মানুষ এই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। আমরা আশা রাখছি, মানুষের এই প্রতিরোধের সামনে মৌলবাদী শক্তি পরাজিত হবেই। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মুক্তমনা প্রগতিশীল মানুষদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা রইল। আমরা এও লক্ষ করছি, বাংলাদেশের এই দুঃখজনক ঘটনাবলীকে হাতিয়ার করে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বাংলায় বিজেপি আরএসএস এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাজারে নেমে পড়েছে। এই বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। ঘৃণা এবং হিংসার কারবারিরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে। এই কাজে তাদের সাহায্য করছে তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিন এবং গোদি মিডিয়া। এসআইআর সহ দেশের নানাবিধ সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করে ভোটের ময়দানে ফায়দা লোটাই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
সংগঠনের নেতৃত্ব বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের সঙ্গে এদেশের বিজেপি আরএসএসের মতো মৌলবাদী শক্তির কোনো তফাৎ নেই। বাংলাদেশে আজ মৌলবাদীরা যা করছে, বহুদিন আগে থেকেই এদেশে বিজেপি-আরএস এস সেই একই কাজ করে চলেছে। এদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, দলিত সম্প্রদায় এবং মুক্তমনা প্রগতিশীল মানুষদের তারা আক্রমণ করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, হত্যা করেছে মুক্তমনা প্রগতিশীল ব্যক্তিদেরও। বাংলাদেশের মৌলবাদীদের মতো এরাও দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে মুছে দিয়ে বিকৃত ইতিহাস চালু করতে চাইছে। দুই দেশের মৌলবাদীদের ভিতরে আসলে কোনো তফাৎ নেই।আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করছি, দীপু দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও এদেশের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী সামান্য দুঃখপ্রকাশ করেও বিবৃতি দিতে পারেননি। তাঁর এই নীরবতার পিছনে রহস্য কী জানতে চাই আমরা। আসলে বাংলাদেশে এই সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বজায় থাকলে রাজনৈতিক লাভ বিজেপির।
আরও বলা হয়েছে, আমরা এই বাংলার মানুষের কাছে আবেদন করছি, বিজেপি আরএসএসের এই ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্তের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য। সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে আমরা সজাগ থাকতে অনুরোধ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলার মানুষ এই অসাধু চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি আরএসএসের বিভাজনের রাজনীতি ব্যর্থ করে দেবেন। বাংলার হিন্দু মুসলমান শিখ খৃস্টান বৌদ্ধ জৈন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অতীতের মতো এখনো হাতে হাত ধরাধরি করে থাকবেন।

0 Comments