ভোটারদের হয়রানি বন্ধ করুন, কমিশনে স্পষ্ট দাবি দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: এসআইআর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। বুধবার এ নিয়ে সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে স্মারকলিপি প্রদান করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে জাতীয় নির্বাচন কমিশন যা করছে, তা এককথায় উন্মাদের কার্যক্রম। দিশাহীন খামখেয়ালি কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসআইআর পর্বের প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশন, সাধারণ মানুষকে, বিশেষত, গরিব প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষকে নিত্য নতুন ফতোয়া জারি করে দুভাগে ফেলছে। এর আগের ভোটার তালিকায় সংশোধনের কাজ থেকে এবারের পার্থক্য এই যে, এর আগে নির্বাচন কমিশন একটি দীর্ঘ সময় নিয়ে এই সংশোধনের কাজ চালিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের ভিতর কোনো বিভ্রান্তি হয়নি। সংশোধনের নাম করে সাধারণ মানুষকে কোনো দুভাগেও ফেলা হয়নি। এবার জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন ধর তক্তা মার পেরেকের মতো করে দেড় বছরের কাজ দেড় মাসের মধ্যে সেরে ফেলতে আসরে নেমেছে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে, প্রতিদিন মানুষের দুভােগও বাড়ছে।"

ডেপুটেশনের পর সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সংগঠনের নেতৃত্ব

এই সংগঠনের বক্তব্য," এসআইআরের প্রথম পর্বে আমরা দেখেছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার নাম করে কিভাবে মানুষের হয়রানি বাড়ানো হয়েছে। গরিব প্রান্তিক সাধারণ মানুষের কাছে এমন অনেক সরকারি শংসাপত্র পাঠানো হয়েছে, যেসব সাধারণভাবে গরিব প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কাছে থাকে। শুধু গরিব প্রান্তিক শ্রেণির মানুষই নয়, সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে এই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি রটিয়ে দিয়েছে ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে তিনি এদেশের নাগরিক নন বলেই গণ্য হবেন। ভোটার তালিকায় এককোটি অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গা আছে বলেও রটানো হয়েছে। এই ধরনের রটনা এবং নির্বাচন কমিশনের অমানবিক কার্যকলাপের ফলে বঠমানুষ আতঙ্কিত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নির্বাচন কমিশনের নিত্যনতুন ফতোয়া জারির ফলে বিএলও-রাও আতঙ্কিত আশঙ্কিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের অন্যায্য চাপের কারণে কয়েকজন বিএলও মারা গিয়েছেন। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এইসব দুঃখজনক ঘটনার জন্য কোনোরকম ক্ষমাপ্রার্থনা তো দূরের কথা, সামান্য শোকটুকুও প্রকাশ করেনি।"

এসআইআরের দ্বিতীয় পর্ব শুনানি নিয়ে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের দাবি, এই পর্বের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষকে এবারও নানাবিধ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও খসড়া তালিকায় বহু ভোটারের নাম নেই। এমনকি এই রাজ্য থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের নামও খসড়া তালিকায় তোলা হয়নি। অথচ নির্বাচন কমিশনই ২০০২-এর তালিকাকে ভিত্তি হিসাবে গণ্য করা হবে বলেছিল। নির্বাচন কমিশন বলেছিল, বয়স্ক প্রবীণ নাগরিকদের বাড়ি গিয়ে তাদের শুনানি করা হবে। তাদের শুনানি কেন্দ্রে এসে লাইন লাগাতে হবে না। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সেসব কিছুই হয়নি। প্রথম দিনই বয়স্ক প্রবীণ বয়স্ক অসুস্থ মানুষকে বাধ্য হয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হল। এমনকি কারওকে কারওকে অ্যাম্বুলেন্সে চেপেও আসতে হল। এতটাই বাস্তবজ্ঞান রহিত এই নির্বাচন কমিশন যে, তারা বলেছে পরিযায়ী শ্রমিক, এমনকি প্রবাসীদেরও সশরীরে শুনানিতে হাজির থাকতে হবে। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যে কাজটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ সেই কাজটি এরকম তাড়াহুড়ো করে করার কারণ কী? বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো এরকম একটি ভোটমুখী রাজ্যে? আমরা এ প্রশ্নও তুলেছিলাম মাত্র দেড়বছর আগে যে ভোটার তালিকায় দেশে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল, তাকে মান্যতা না দিয়ে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি হিসাবে ধরার কারণ কী? এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর নির্বাচন কমিশন কখনো দেয়নি।

দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ প্রথম থেকেই বলে আসছে, জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। তারা বিজেপির স্বার্থরক্ষাকারী একটি সংস্থা মাত্র। জ্ঞানেশ কুমারের আমলে নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা পুরোপুরি হারিয়েছে। এসআইআরের নাম করে নির্বাচন কমিশন যা করছে তাতে তাদের এই পক্ষপাতমূলক আচরণ আরও প্রকট হয়েছে। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের দাবি, অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের ওপর এই হয়রানি বন্ধ করুন। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে ভোটার তালিকার সংশোধন করুন। মানুষকে কোনোরকম আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখার অধিকার নির্বাচন কমিশনকে কেউ দেয়নি। ভোটার তালিকা থেকে প্রকৃত ভোটারের নাম যাতে বাদ না পড়ে সেটা দেখাই নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য। সামান্য ছুতো দেখিয়ে প্রকৃত ভোটারের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য কখনই হতে পারে না। 

Post a Comment

0 Comments