ওড়িশায় মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক খুন: মানবাধিকার কমিশনে নালিশ সিটুর

সুরজ মন্ডল, ভূবনেশ্বর:

সম্প্রতি ওড়িশায় উগ্র সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাঙালি মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানা। সেই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করল বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন সিটু। ওড়িশা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সনকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। দাবি করা হয়েছে, ওড়িশার বিভিন্ন জেলায় বজরং দল ও বিশ্বহিন্দু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ থাকা দুষ্কৃতীদের দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক, পথবিক্রেতা ও খ্রিস্টান নাগরিকদের উপর সংঘটিত নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘন—যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, গুরুতর শারীরিক আক্রমণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং জীবিকা অর্জনে বাধা।

মানবাধিকার কমিশন সিটু বলেছে, ওড়িশা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক, পথবিক্রেতা এবং খ্রিস্টান নাগরিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতা, ভয়ভীতি, শারীরিক আক্রমণ, পুলিশি সুরক্ষা অস্বীকার এবং বিচার না পাওয়ার গুরুতর ও উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫, ১৯(১)(গ), ২১ ও ২৫ নং অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক মানবাধিকারগুলির চরম লঙ্ঘন এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি, বিশেষত আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদ (ICCPR)–এর সরাসরি পরিপন্থী। দৈনিক সংবাদপত্র “ধরিত্রী”–তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার রাত আনুমানিক ১০টা নাগাদ, সম্বলপুর শহরের ঐন্থাপালি থানার অন্তর্গত দেহেরিপালি এলাকায়, বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ থাকা চারজন দুষ্কৃতী দ্বারা একটি পরিকল্পিত ও নৃশংস আক্রমণ সংঘটিত হয়। উক্ত দুষ্কৃতীরা ভুক্তভোগীদের জোরপূর্বক আধার কার্ড দেখতে চায় এবং “বাংলাদেশি” বলে আখ্যা দিয়ে হঠাৎ তাদের উপর নির্মম হামলা চালায়। হামলায় জুয়েল রানা (বয়স ১৯ বছর), পিতা—জিয়াউল হক, গ্রাম—চকবাহাদুরপুর, ফতুলাপুর, ডাকঘর—ফতুলাপুর, জেলা—মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা খুন হয়েছেন। বর্তমানে সম্বলপুরের দেহেরিপালিতে কর্মরত এক পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন, তাঁকে মারাত্মকভাবে প্রহার করা হয়, যার ফলে তাঁর মৃত্যু ঘটে। একই ঘটনায় আরও তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক গুরুতরভাবে আহত হন এবং বর্তমানে তাঁরা সম্বলপুর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিটু অভিযোগ করছে, এই ঘটনাটি সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।খ্রিস্টান নাগরিক ও পথবিক্রেতাদের উপর আক্রমণ নিয়েও সরব সংগঠনটি। জানানো হয়েছে, পুরী জেলায় খ্রিস্টান নাগরিকদের উপর দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালিয়ে তাঁদের ক্রিসমাস উৎসব পালন না করতে হুমকি দেয়, এবং সাম্প্রদায়িক উক্তি করে বলে যে “ওড়িশা ভগবান জগন্নাথের ভূমি”। ক্রিসমাস সংক্রান্ত সামগ্রী বিক্রয়কারী পথবিক্রেতাদেরও মারধর করা হয় এবং জোরপূর্বক তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়, যা তাঁদের ধর্মপালনের অধিকার ও জীবিকা অর্জনের অধিকার–এর সরাসরি লঙ্ঘন।


এই পরিস্থিতিতে কমিশনের কাছে সিটু দাবি করেছে জুয়েল রানার হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য আহত পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাব মামলা গ্রহণ করা হোক। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সময়সীমাবদ্ধ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক; ওড়িশার ডিজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের নোটিশ জারি করা হোক; অবিলম্বে এফআইআর নথিভুক্ত, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা হোক; নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক; সংখ্যালঘু ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন, জীবিকা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হোক; ন্যায় ও মানবাধিকারের স্বার্থে কমিশন উপযুক্ত মনে করলে অন্য যে কোনও আদেশ প্রদান করা হোক।

Post a Comment

0 Comments