ফাইনালে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করে এশিয়া কাপ দখল করল ভারত

বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। খেলার শেষে প্রমাণিত হল ভারত হল এশিয়া সেরা। রবিবাসরীয় দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ২০ রানে তিন উইকেট হারানোর পরও পাকিস্তানকে দুই বল বাকি থাকতে হারিয়ে দিল ভারত। সেই সঙ্গে নবম বার চ্যাম্পিয়ন হল এশিয়া কাপে।

এ দিন শর্মাজিক বেটা ব্যর্থ হলে তাঁর অভাব পুষিয়ে দেন বর্মাজির ছেলে। হার্দিক পান্ডিয়া না থাকলে স্পিনাররা তাঁর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আর এসব মিলিয়ে এশিয়া কাপ ২০২৫- পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল ১৮০ রান অন্তত উঠবেই। কিন্তু পাক ব্যাটিংয়ের মিডল অর্ডারের রোগ আর সারল না। ওপেনিং জুটিতে ৮৪ রান ওঠার পরও তাদের ইনিংস থেমে গেল ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে। শেষ সাত উইকেটের পতন হল ৩২ রানে। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন পাক ব্যাটাররা। কুলদীপ নিলেন চার উইকেট। অক্ষর আর বরুণ নিলেন দুটি করে উইকেট। আর শেষ দুটি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থামালেন বুমরাহ।

টিম ইন্ডিয়া 

ফাইনালে টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। চোটের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেই দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। দলে ফিরেছেন শিবম দুবে। দলে একমাত্র স্পেশালিস্ট পেসার হিসাবে রয়েছেন জসপ্রীত বুমরাহ। ভারতের হয়ে বোলিং ওপেন করে শিবম দুবে। পাকিস্তানের দুই ওপেনার প্রথম থেকেই প্রত্যাঘাতের পথ বেছে নিয়েছিল। প্রথম চার ওভারে উঠল ৩২ রান। ভারতের বিরুদ্ধে সুপার ফোরের ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন শাহিবজাদা ফারহান। বুমরাহর দ্বিতীয় ওভারে নিলেন ১২ রান। পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তান তুলল ৪৫ রান। এই প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট পেল না ভারত। ফারহানের অর্ধশতক এল ৩৬ বলে। এরপরই অবশ্য এই পাক ওপেনার আউট হয়ে যান ৩৮ বলে ৫৭ রান করে। বরুণ চক্রবর্তীর বলে তিলক বর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলল ৮৭ রান। ১২তম ওভারে বল করতে এলেন পার্ট টাইম বোলার তিলক বর্মা। তাঁকে চার মেরে পাকিস্তানের রান ১০০ পার করে দিলেন ফখর জামান। এদিন প্রথম দুই ওভারে নিজের ছন্দ খুঁজে পাননি কুলদীপ। অবশেষে নিজের তৃতীয় ওভারে এল সাফল্য। তাঁর বলে জসপ্রীত বুমরাহর হাতে ক্যাচ তুলে ফিরলেন সাইম আইয়ুব (১১ বলে ১৪)। চলতি এশিয়া কাপে চার ম্যাচে শূন্য করা আইয়ুব এদিনও রান পেলেন না।

এরপরই মহম্মদ হ্যারিসকে খাতা খোলার আগেই ফেরালেন অক্ষর প্যাটেল। রিঙ্কু সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ১১৪ রানে পতন হল পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেটের। দলীয় ১২৬ রানে বরুণ চক্রবর্তীর বলে কুলদীপের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩৫ বলে ৪৬ রান করে ফিরলেন ফখর। পাকিস্তানর মিডল অর্ডার যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করল। পাঁচ রানের মধ্যেই ফের উইকেট পতন। অক্ষরের বলে মাত্র এক রান করে সঞ্জুর হাতে ক্যাচ তুলে ফিরলেন হুসেন তালাত। এরপরই কুলদীপের বলে এক রান করে ফিরলেন পাক অধিনায়ক সলমন আঘা। চলতি টুর্নামেন্ট তাঁর কাটল দুঃস্বপ্নের মতো। শাহিন আফ্রিদিও খাতা খোলার আগেই ফিরলেন কুলদীপের বলে। তাঁরই বলে এরপর শূন্য করে ফিরলেন ফাহিম আশরাফ। চার ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন কুলদীপ। শেষ ওভারেই ভারতের এই রিস্ট স্পিনার নিলেন ৩ উইকেট। চলতি এশিয়া কাপে ১৭ উইকেট হয়ে গেল তাঁর।

নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে হ্যারিস রউফকে (৬) ফেরালেন বুমরাহ। এরপর নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে পাকিস্তানের লেজ মুড়িয়ে দিলেন বুমরাহ। ৩২ রানে পড়ল পাকিস্তানের শেষ সাত উইকেট। ১৯.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তুলল ১৪৬ রান।

জয়ের জন্য ১৪৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ভারত। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দুরন্ত খেলা অভিষেক শর্মা মাত্র ৫ রান করে ফাহিম আশরাফের বলে হ্যারিস রউফের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যান। এদিনও রান পেলেন না ভারত অধিনায়ক। মাত্র এক রান করে শাহিন আফ্রিদির শিকার হলেন তিনি। ভারতের দ্বিতীয় উইকেটের পতন হল ১০ রানে। রান পেলেন না শুভমান গিলও। ফাহিমের বলে ১০ বলে ১২ রান করে ফিরলেন তিনি। এদিনই চলতি এশিয়া কাপের পাওয়ার প্লেতে সব থেকে কম রান তুলল ভারত। প্রথম ছয় ওভারে উঠল দুই উইকেট হারিয়ে ৩৬।

প্রথম দশ ওভারে ভারতের উঠল তিন উইকেট হারিয়ে ৫৮। ১২ রানে জীবনদান পেয়েছিলেন সঞ্জু। কিন্তু ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে পারলেন না। ২৪ রান করে আবরারের আহমেদের বলে আউট হলেন তিনি। ৭৭ রানে পতন হল ভারতের চতুর্থ উইকেটের। ১৯তম ওভারের শেষ বলে ফিরলেন শিবম দুবে। করলেন ২২ বলে ৩৩ রান। তাঁর ও তিলকের জুটিতে উঠল ৬০ রান। এরপর আর অবশ্য কোনও উইকেট পরেনি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভারতকে জয় এনে দিলেন রিঙ্কু সিং। ৫৩ বলে ৬৯ রানের দুরন্ত অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারতের জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি এদিন তিলক বর্মা।

Post a Comment

0 Comments