সুমন দাস, মালদা
মালদার কয়েকশো বছর ধরে চলা রথযাত্রা আটকে দিচ্ছে পুলিশ। হিন্দুদের ধর্মাচরণ নিয়ে প্রশাসন গা-জোয়ারি করছে। এইরকম হাজার কথা প্রচার করছে বিজেপিঘনিষ্ট নেতারা। এবার এই বিষয়ে মুখ খুলল মালদা পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মালদা জেলা পুলিশ বলেছে, 'প্রশাসনের নজরে এসেছে যে,কালিয়াচক থানা এলাকার জালালপুর রথযাত্রা উপলক্ষে কিছু ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হচ্ছে, যা বাণিজ্যিক বা অন্য কোন স্বার্থে করা হচ্ছে বলে ধারণা।
এ বিষয়ে সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, জালালপুর রথযাত্রা আমাদের জেলার অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। তবে একটি দেওয়ানি মামলার কারণে এবং সংশ্লিষ্ট আইনি জটিলতার জন্য এই উৎসব অনেক বছর ধরে বন্ধ ছিল। এই বিবাদ ছিল জালালপুর রথ সংস্কার কমিটির সভাপতি বুদ্ধদেব ঘোষ ও সম্পাদক গৌতম মন্ডল এবং ওই জমির মালিক শংকর প্রসাদ চৌধুরী (পিতা: স্বর্গীয় ক্ষিতীশ চৌধুরী) — এই পক্ষগুলোর মধ্যে।
![]() |
পুলিশের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট |
এই উৎসবের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে, কালিয়াচক থানার উদ্যোগে ২০২২ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা গড়ে তোলা হয় এবং রথযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর রথযাত্রা নির্ধারিত পুলিশি নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো যাচ্ছে যে, যেই জমিতে রথযাত্রা হয়, সেই জমি এখনও আইনি বিবাদে জড়িত এবং মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। পুলিশের ধারাবাহিক হস্তক্ষেপের ফলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত জমির মালিকরা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন রথযাত্রা ও উল্টো রথের জন্য একটি অনাপত্তি পত্র (NOC) প্রদান করেছেন। কিন্তু তারা মেলা, দোকানপাট বা কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি দেননি, কারণ তাতে জমির ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এই অনুযায়ী, প্রশাসন শুধুমাত্র অনাপত্তি পত্রের শর্ত অনুযায়ী ধর্মীয় রথযাত্রার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু মেলা বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি প্রদান করেননি। সম্প্রতি মাননীয় কলকাতা হাইকোর্ট-ও প্রশাসনের এই আইনগত অবস্থানকে সমর্থন করেছেন এবং মেলার অনুমতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করেছেন।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য যে, ২০০৫ ও ২০০৯ সালে রথযাত্রার সময় মেলা উপলক্ষে গুরুতর আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাতে প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই থেকেই ঐ স্থানে আর কোনো মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজবে কান দেবেন না। বাস্তব সত্য হলো, প্রশাসনই এই রথযাত্রা পুনরায় শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছেন এবং সবকিছু আইনসম্মত ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।আপনাদের সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা ও নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ উৎসবের কামনা রইল।'
0 Comments