ঐতিহ্য ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নবরূপে কলকাতা ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ

আসিফ রেজা আনসারী

পূর্ব ভারতের একমাত্র ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটি অবস্থিত কলকাতার তালতলা এলাকার ৮/১ আবদুল হামিদ লেনে। ইউনানি বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালু রয়েছে এখানে। পাশাপাশি সামান্য পয়সায় সর্বসাধারণের জন্য চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হয়। ৩০ টাকা দিয়ে একটা ওপিডি-টিকিট কাটলেই ডাক্তার দেখানো পুরোপুরি ফ্রি। সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য মিলছে ইউনানি ওষুধও। এখান থেকে চিকিৎসা করিয়ে অনেকেই সুস্থ হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমীক্ষা বলছে, আয়ুষের উপর মানুষের ভরসা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে আয়ুষের অধীন ইউনানি চিকিৎসাতেও মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পুবের কলম প্রতিবেদক তাই ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাল-হকিকত দেখতে যান।

দেখা গেল, এখানে চিকিৎসার জন্য রাজাবাজার থেকে এসেছেন সুলতানা বেগম নামে এক রোগী। তিনি বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের অনেকেই এখানে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ আছি। চর্মরোগের জন্য ডাক্তার দেখাতে আসা বারুইপুরের সুমন মণ্ডল জানান, তিনি আগে হোমিও-অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করিয়ে ভালো ফল পাননি। তারপর ইউনানি মেডিসিন খাওয়া শুরু করেন দুই সপ্তাহ আগে। তাঁর অসুখ সারতে শুরু করেছে বলেও জানান সুমনবাবু। এইরকম অনেক রোগীর সঙ্গে কথা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, কোনও ‘সাইড ইফেক্ট’ নেই, এটাই ইউনানির অনন্যতা। তবে হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও উন্নত করতে সরকারি সাহায্য দরকার বলেও মনে করেন চিকিৎসকরা।

Calcutta Unani Medical College and inside Principal, deputy-super

এ বিষয়ে ইউনানি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুহাম্মদ আয়ুব হাসান জানান, পরিকাঠামো উন্নত করা থেকে পঠনপাঠনের সুবিধার জন্য ২০১০ সালে রাজ্য বিধানসভায় পাস হয়েছে। যদিও সেই আইন কার্যকরী হয়নি। সরকারিভাবে কলেজকে অধিগ্রহণের দাবিতে রাজ্যের স্বাস্থ্যভবন থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তারপরও সুরাহা হায়নি। এই কলেজ কিছুটা আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। তাই দ্রুত এই কলেজকে অধিগ্রহণ করুক রাজ্য সরকার। এমনটাই চান পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা।

অন্যদিকে কলেজের ডেপুটি-সুপার ডা. দানিশ জাফর বলেন, আমাদের কলেজে বহু অমুসলিম পড়ুয়া বর্তমানে পড়াশোনার জন্য আসছে। বাঙালি ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ইংরেজির পাশপাশপাশি বাংলার প্রতিও জোর দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি ছেলেমেয়েরা যাতে পাড়াশোনা করতে পারে তারজন্য আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমাদের ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, ক্লাস-রুম আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত। ৬০ শয্যার হাসপাতাল আছে। যারা এমবিবিএস বা অন্য কিছুর সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের জন্য অন্যতম বিকল্প হতে পারে বিইউএমএস। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে ডিগ্রি সমান মর্যাদা পাবে। সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্র্যাক্টিশ করেও মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, দ্যা ক্যালকাটা ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। বর্তমানে এই কলেজের ব্যাচেলর অব ইউনানি মেডিসিন সার্জারি (বিইউএমএস)- এ ছাত্রছাত্রীর মোট আসন সংখ্যা ২০০ জন। ডাক্তার-শিক্ষক রয়েছেন ৩৪জন। মোট শিক্ষক পদ (৩৮)। আয়ূসের তত্বাবধানে থাকা এই কলেজ পশ্চিমবঙ্গ ইউনিভারসিটি অব হেলথ সায়েন্স-এর সিলেবাস ও নির্দেশিকা অনুসরণ করে। এই বছর নিট(ইউজি) পাস যারা করেছে তারা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবে। সায়েন্স শাখার পড়ুয়াদের জন্য সম্ভাবনাময় কোর্স বিইউএমএস।

(সৌজন্যে- পুবের কলম) 

Post a Comment

0 Comments