ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের নির্যাতন, কালীঘাটে বিক্ষোভে জাতীয় বাংলা পরিষদ

জাহানারা খাতুন

বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তেমন কিছু করছে না বলেও অভিযোগ। তাই রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নিল নাগরিক সমাজ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাতে অবিলম্বমা মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার দাবিতে বুধবার বিকালে মিছিল হয় কলকাতায়।

এ দিন বিকাল ৪টের সময় রাসবিহারী থেকে জাতীয় বাংলা পরিষদ নামে এক সংগঠনের ডাকে 'কালীঘাট চলো' অভিযান হয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাংলার বাইরের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালির উপর হয়ে চলা অত্যাচারের যথোপযুক্ত বিহিত চেয়ে মিছিল বলে জানান উদ্যোক্তারা। মিছিলে ছিলেন ডা. অরিন্দম বিশ্বাস, প্রণোজিৎ দে, আইনজীবী আসফাক আহমেদ, শামসুল প্রমুখ। 

ছবি সংগ্রহ 

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাবরে দেওয়া চিঠিতে "জাতীয় বাংলা পরিষদ"-এর তরফ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বিভিন্ন রাজ্যে কর্মসুত্রে যাওয়া বিভিন্ন বাঙালির উপর হওয়া অত্যাচারের বিহিত চেয়ে আমরা এই ডেপুটেশন প্রদান করছি। ওড়িশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কাজ করতে যাওয়া বাঙালিদের উপর বিশেষ করে মুসলমান বাঙালিদের উপর বাংলাদেশী বলে মারধর করা হচ্ছে, তাদেরকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, দোকান, বাড়িঘর ইত্যাদি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরত চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষ চরমে উঠেছে এবং এই বিদ্বেষ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমাদের পাশের রাজ্য উড়িষ্যা যে শুধু উড়িষ্যায় থাকা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের উপর অকথ্য অত্যাচার করছে তাই নয় তারা বাংলার জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করেও তীব্র সমালোচনা করে চলেছে। 

আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা সর্বদাই সহাবস্থানে বিশ্বাস করি তাই আমাদের রাজ্যে ওড়িশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে কাজ করলেও তারা কখনও ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে অত্যাচারের শিকার হন না, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের রাজ্যের বাসিন্দারা অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে তারা ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে অত্যাচারের শিকার হন। এমতাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে "জাতীয় বাংলা পরিষদ"-এর দাবি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা যাতে এই রাজ্যের মধ্যে কাজ পান সেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা যাতে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কাজ পান তার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে সরকারি ক্ষেত্রে ৯০% এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে ৮০% ভুমিসন্তান সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা যাতে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কাজ পান তার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পরিষেবা যাতে বাংলা ভাষায় দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা যাতে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কাজ পান তার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাংলা ভাষার লিখিত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজ করতে যাওয়া সমস্ত বাঙালিদের সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সরকারের কাছে থাকতে হবে যাতে তাদের কোনো বিপদ হলে সরকারের পক্ষে সাহায্য করতে সুবিধা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজ করতে যাওয়া সমস্ত বাঙালিদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে হবে যাতে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজ করতে যাওয়া কোনো বাঙালি বিপদে পড়লে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments