বেঙ্গল মিরর ডেস্ক: এমনও মানুষ আছেন যাদের জন্ম এবং মৃত্যু এখানেই হয়েছে। কত বছর ধরে ফুটপাথ ও রাস্তার ধারে বসবাস করছেন তার সঠিক হদিশ নেই। তারপরও পুলিশ জোর করে তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা গেছে, শিয়ালদহ রাজাবাজার এলাকার ২৯৯ এপিসি রোডের ধারে ঝুপড়ি করে বসবাস করছেন প্রায় ২০-২২টি বাঙালি মুসলিম পরিবার। তাদের অন্যত্র থাকার কোনও জায়গা নেই। এখানেই তারা থাকেন। বৃহস্পতিবার বিকালে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ তাদের জোর করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এমনকি তিনটি ঝুপড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ঠিক কি কারনে এমনটা করা হচ্ছে তার সদুত্তর দেয়নি পুলিশ। মহিলারা ভিযোগ করছেন, তারা এখান থেকে না সরলে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিয়েছে। যদিও পুলিশ এ ব্যাপারে কিছু জানাতে চায়নি।
![]() |
ঘরহারা মহিলারা |
জানা গেল, এই ঠিকানায় প্রায় ২৫টি পরিবার থাকে। তার মধ্যে ৩টি ঝুপড়ি-ঘর বৃহস্পতিবার ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, ঝুপড়ি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে জামা-কাপড় ও বাসনপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যেই পড়াশোনা করছে মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র মুহাম্মদ ফারহান, রোজি খাতুন, আয়েশা খাতুনরা। তারা এখন কোথায় যাবে, পড়াশোনা হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। একইভাবে তাদের মায়েরা আতঙ্কে আছে। গৃহবধূ আরজিনা বিবি, শাহজাদি বা রেশমা বিবিদের বক্তব্য, তাদের থাকার জায়গা নেই। ফুটপাথের পাশের বস্তিই ছিল ভরসা। পুলিশ যে ৩টিঝুপড়ি ভেঙে দিয়েছে, তারা খোলা আকাশের নিচে থাকবেন কীভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, সমস্যা নিয়ে কলকাতার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বা স্থানীয় বিধায়কের অফিস থেকেও মেলেনি সাহায্য। উচ্ছেদ নিয়ে জানতে থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোনে থানার অফিসার ইনচার্জকে পাওয়া যায়নি। তবে থানারই এক পুলিশকর্মী, যিনি উচ্ছেদের সময় গিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা, তাকে ফোন করা হয়। তিনি বলেন, তিনি এই বিষয়ে মুখপাত্র নন, তাই কিছুই বলবেন না। তাঁকে জানানো হয় যে হিন্দি বা উর্দুভাষীদের না তুলে বেছে বেছে বাঙালিদের তুলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ কি সত্যি? তিনি জানান, কিছুই বলবেন না।
![]() |
পুলিশ ভেঙেছে ঝুপড়ি। খোলা আকাশের নিচেই চলছে পড়াশোনা |
এ নিয়ে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান, স্থানীয় বিধায়ক ও প্রশাসনের কাছে মানবিকভাবে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছে ভূমিপুত্র উন্নয়ন মোর্চা অফ ইন্ডিয়া বা ভূমি। সংগঠনের তরফে ইমরাজ শেখ বলেন, কয়েক প্রজন্ম ধরে এরা এখানে বসবাস করছে। সবাই বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিক। বিকল্প ব্যবস্থা না করে তুলে দেওয়া হলে যাবে কোথায়। মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষা ও ইজ্জত রক্ষার জন্য সরকারকে মানবিকভাবে দেখতে হবে।
(তথ্য ও প্রতিবেদন দৈনিক পুবের কলম সৌজন্যে)
0 Comments