আসিফ রেজা আনসারী
দেশের শিক্ষা মানচিত্রে সর্বদা অগ্রনী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ফের আরও এক ধাপ এগোল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যাঁদের দৃষ্টিশক্তি কম বা চোখে মোটেও দেখতে পান না। তাঁদের জন্য খুলল বিশেষ লাইব্রেরির দরজা। এবার সবাই পড়াশোনা করবে সমানতালে। প্রযুক্তি, সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার মিলনে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠাগারকে করে তুলল অত্যাধুনিক। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণাস্তরের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই পাঠাগারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, এমন পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক ছিল বলেই জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগে এই পাঠাগার ছিল প্রায় অকেজো। মাত্র একটি ব্রেইল ছাপার যন্ত্র ছিল, যার মাধ্যমে পাঠ্যবই রূপান্তরে ছয় থেকে আট মাস সময় লেগে যেত। পাঠ্যশ্রবণ প্রস্তুতকারী যন্ত্র, আয়তনবর্ধক যন্ত্র (ম্যাগনিফাইং গ্লাস) বা ভাষান্তর সফটওয়্যারের মতো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাবে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষায় বড় বাধা ছিল। এবার সবটা সহজ হবে বলেই জানান যাদবপুরের ড. ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি।
![]() |
Photo by Sohini Sengupta |
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়া ব্যবস্থাযুক্ত লাইব্রেরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এই উদ্যোগের মূল পরিকল্পনাকারী তথা যাদবপুরের দুই প্রাক্তনী বিষ্ণু ধানধানিয়া ও ড. রঞ্জিত চক্রবর্তী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রোটারিয়ান কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত, যাবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য ড. ভাস্কর গুপ্ত, রেজিষ্ট্রার প্রমুখ।
জানা গিয়েছে, রোটারি ক্লাব ও দেশ-বিদেশে কর্মরত যাবপুরের বহু প্রাক্তনী আর্থিক সহায়তা দিয়ে নয়া প্রযুক্তিনির্ভর পাঠাগার প্রস্তুত করেছে। এই প্রকল্পের মূল নেতৃত্ব দিয়েছে রোটারি ক্লাব অফ বেলুড়, ক্যালিফোর্নিয়ার রোটারি ক্লাব অফ ড্যানভিল, রোটারি ক্লাব অফ ক্যালকাটা সাউথ সিটি টাওয়ার্স, ক্যালকাটা চৌরঙ্গী, ক্যালকাটা নর্থ ইস্ট, ক্যালকাটা ইউভিস, রিচমন্ড এবং চিকো প্রভৃতি সংস্থা।
এ নিয়ে কর্মকর্তারা জানান, নবনির্মিত পাঠাগারে যুক্ত হয়েছে ব্রেইল স্পর্শপঠ্য যন্ত্র যার মাধ্যমে বইয়ে যন্ত্র ঠেকালেই পড়া যাবে। একইসঙ্গে রয়েছে স্বয়ং পাঠ সহায়ক ব্যবস্থা, উন্নত পাঠ্য স্ক্যানার, শ্রবণযোগ্য পাঠ যন্ত্র, ব্রেইল ছাপার যন্ত্র, দৃশ্যবর্ধক যন্ত্র এবং ভাষান্তর সহায়ক প্রযুক্তি। পাশাপাশি, নির্মাণ করা হয়েছে সকলের জন্য বিশেষ শৌচাগার, স্পর্শযোগ্য পথনির্দেশ-সহ সুরক্ষা রেলিং, রেকর্ডিং ঘর, ২০ জন শিক্ষার্থীর উপযোগী পাঠকক্ষ এবং সম্পূর্ণ ব্রেইল নির্দেশপত্র। বিষ্ণু ধানধানিয়া বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল যাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী মর্যাদার সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারে। এবার তা পূরণ হল। একই কথা বলেন ড. রঞ্জিত চক্রবর্তী। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্তর কথায়, আমরা সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগে বিশ্বাস করি। এই পাঠাগার আমাদের অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনের অঙ্গীকারকে দৃঢ় করবে।
0 Comments