আসিফ রেজা আনসারী
কলকাতা শহরের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে নানা ভাষাভাষী এবং জাতি-ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস। প্রত্যেকটা মানুষ এখানে নিজের মত করে বেড়ে ওঠার পরিবেশ পান। আর তাই তো এই কলকাতা শহরে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি বা বৌদ্ধ ধর্মের নানান উপাসনালয় রয়েছে। তবে আর্থ-সামাজিক নানান কারণে সব জায়গাতেই সমান সুযোগ থাকে না। তাই ধর্মীয় অপরিহার্য উপাসনা পালন করতে কলকাতার একাধিক জায়গায় মুসলিমদের অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। যাদবপুর, চকগড়িয়া, রুবি, মুকু¨পুর প্রভৃতি এলাকায় অন্যতম সমস্যা হল, সেই জায়গাগুলিতে নেই কোনও মসজিদ। ফলে বহু দূরে গিয়ে নামায আদায় করতে হয়। বিশেষ করে জুম্মার দিনে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় মুসলিমদের।
সম্প্রতি রুবি, বাইপাস, কসবা, রাজডাঙা, মুকু¨পুর এলাকা ঘুরে দেখেন প্রতিবেদক। কথা বলেন স্থানীয় বাসি¨াদের সঙ্গে। সবাই বলছেন, তাঁরা হি¨ু-মুসলমান মিলেমিশে থাকেন, কোনও সমস্যা নেই। তবে এলাকায় মসজিদ নেই, তাই নামায আদায় করার জন্য অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অন্যান্য নামায বাড়িতে আদায় করলেও জুম্মার নামায (যা সমবেত বা জামাতবদ্ধ হয়ে আদায় করতে হয়) পড়ার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। আবদুল খালেক নামে রুবি এলাকার এক আইটি কর্মী জানান, তিনি ঘরেই নামায পড়েন নিয়মিত। কাছে মসজিদ নেই তাই রাজডাঙায় মোল্লাপাড়ায় একটি মসজিদ আছে সেখানে যান। অন্যদিকে, পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্মী সাজিদ হাসান বলেন, তিনি জুম্মার নামায পড়ার জন্য যাদবপুরের কেপিসি-র পাশে খুরশিদ মসজিদে যান। মাঝে মাঝে বোসপুকুর বা হালতু মসজিদে যান।
যাদবপুর, সন্তোষপুর, কসবা, হালতু, কালিকাপুরের মানুষজন হালতু মসজিদেও যান নামায পড়তে। বাকি নামায বাধ্য হয়ে বাড়িতে পড়তে হয় তাঁদের। একই কথা জানান, রাজডাঙা মসজিদের ইমাম আবদুল আজিম। তিনি বলেন, আমাদের পাড়ায় প্রায় ৫৯০-৬০ ঘর মুসলিম রয়েছেন। অন্যান্য ওয়াক্ত নামাযের সময় ২০-২২ জন উপস্থিত থাকেন। তবে জুম্মার দিনে তিন-চারশো মানুষ নামায আদায় করেন। ছোট মসজিদটির চারতলা ভর্তি হয় যায়। পাশে বাড়ির একটি ছাদেও নামায হয়। এই মসজিদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালের দিকে। একটি পুরনো বাড়ি কিনে প্রথমে নামায শুরু হয়। বর্তমানে চারতলা বিল্ডিং হয়েছে। তিনি ২০১২ সাল থেকে এখানে ইমামতি করেন।
অন্যদিকে, বোসপুকুর জামে মসজিদেরও পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়। জুম্মার দিনে হাজার খানেক মুসল্লি নামায পড়েন। রাজডাঙার মতো এখানেও মুসল্লিদের বেশিরভাগ বাঙালি। ইমামও একজন বাংলাভাষী। এখানকার ইমাম জানান, তিনি সম্প্রতি মক্তব চালু করেছেন। ১০-১২ জন করে পড়তে আসে। আগামীতে বড়দের জন্য ইসলাম শিক্ষার আসর করতে চান। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইমাম হবেন নেতা। তাই সবার কাজ হবে ইমামের কথা মেনে আল্লাহ্র রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা। অন্যদিকে, হালতু মসজিদেও নিয়মিত নামায আদায় হয়। বহু দূর থেকে মানুষজন নামায আদায় করতে আসেন। রুবি, বাইপাস, মুকু¨পুর এলাকায় বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যবিত্ত একটা শ্রেণির মানুষজন কর্মসূত্রে থাকছেন। তাঁদের জন্য মসজিদ দরকার বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলাউদ্দিন খান। তিনি বলেন, মসজিদ থাকলে নামাযের চর্চা বাড়বে।
(সৌজন্যে পুবের কলম)
0 Comments