ঐতিহ্যবাহী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে চলছে চরম অরাজকতা, গরিমা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট বিশিষ্টরা

আসিফ রেজা আনসারী

১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে চলছে চরম অরাজকতা। বর্তমান কমিটির সদস্যরা এই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত নিয়ম-কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের মতো করে পরিচালনা করছেন। ফলে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ও উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বর্তমানের বৃহৎ পাঠক, গবেষকরা। সম্প্রতি এ নিয়ে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের এক সভায় হট্টগোল দেখা যায়। এই শতাব্দী প্রাচীন সংগঠনের বহু পুরনো পদাধিকারী ও সদস্য নানা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বর্তমান পরিচালকমণ্ডলী।সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করেন পাঠকদের একাংশ। 

সাংবাদিক সম্মেলন অভিযোগ করা হয়, বর্তমান পরিচালকমণ্ডলীর কর্মকর্তারা সরকারি অনুদান নিয়ে নয়–ছয় করছেন। নিমাই চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির অনুদানকৃত ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাটি কিনে তার নাম পরিবর্তন করে জয়শ্রীভবন রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পবিত্র সরকার।কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, এবারের বার্ষিক সাধারণসভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামত না নিয়ে কিংবা তাদের অনুমোদন ছাড়াই একতরফাভাবে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন করা হয়। উপস্থিত সদস্যদের একটা বড় অংশ অন্য একটি প্যানেলকে সমর্থন করতে প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু তাদের সমস্ত আপত্তিকে অগ্রাহ্য করা হয় বলে অভিযোগ।

ছবি নিজস্ব 

আরও অভিযোগ, বহুদিন ধরে কোনও সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বহু মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। সাময়িকভাবে দু-তিন মাসের জন্য গ্রন্থাগার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও বারবার তা রিনিউ করাতে হয়। যা গবেষক ও পাঠকদের ক্ষেত্রে সমস্যার বলে অভিযোগ। এই সংগঠনের একটি পুথি ছাড়াও রয়েছে পত্রিকা প্রকাশনা বা অন্যান্য বিভাগ। সেখানেও অরাজকতার অভিযোগ। যদিও এ নিয়ে পরিচালকমণ্ডলীর মতামত পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ একটি বহু প্রাচীন সংস্থা। এই সংস্থার সঙ্গে যে নাম জড়িয়ে আছে রমেশচন্দ্র দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু , আচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীসহ বহু মনীষীর নাম। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এই সংস্থার গুরুত্ব অনুভব করে নানা সময়ে আর্থিক সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়া অনাবাসী এক ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষের অনুরোধে তার অস্থাবর সম্পত্তির প্রায় ৬ কোটি টাকা দান করেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে ভারত সরকার প্রায় ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিল। আর এগুলো করা হয়েছে গ্রন্থশালা, পুথিশালা, চিত্রশালা বা মিউজিয়াম, পত্রিকা প্রকাশনা ও আলোচনাসভায় কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য। কিন্তু বর্তমান দায়িত্বশীলরা এই সংগঠনের কাজ সঠিকভাবে করছে না বলে অভিযোগ তুলেছে পাঠক সমাজের একাংশ।

Post a Comment

0 Comments