বিচারকের চেয়ারে রাজমিস্ত্রির সন্তান, রাহুলের সাফল্যে খুশি সংখ্যালঘুসমাজ

আসিফ রেজা আনসারী

নিজে সামান্য রাজমিস্ত্রি। আর্থিক দূরাবস্থার কারণে সেভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে হবে, এমনই স্বপ্ন দেখতেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা মঙ্গলজান গ্রামের বাসিন্দা হাসিবুল সেখ। ছেলেও চাইতেন কিছু একটা করতে হবে। বাবার স্বপ্ন ও ছেলের অদম্য পরিশ্রমে এবার বিচারকের চেয়ারে বসতে চলেছেন রাজমিস্ত্রির সন্তান রাহুল সেখ।

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের রাজমিস্ত্রির ছেলে রাহুল সেখ বিচারকের আসনে বসবেন খুব শীঘ্রই।মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত হয়েছে রাজ্য জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা–২০২২ এর ফলাফল। সেই তালিকার দ্বাদশতম স্থান করেছেন রাহুল। তিনি প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেবেন। কেমন ছিল তার পড়াশোনার যাত্রাপথ, আগামীতেইবা কি করতে চান খোঁজ নিল প্রতিবেদক। 

ছবি নিজস্ব 

রাহুল জানান, আইন নিয়ে পড়তে পড়তে ২০১৫ সাল থেকে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা সম্পর্কে অবগত হন। তখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। ২০২০ সালের প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই প্রিলিমিনারি, মেনস এবং ইন্টারভিউ পর্ব পেরিয়ে ওয়েটিং লিস্টের দুই নম্বর স্থান দখল করেছিলেন। একটুর জন্য হাতছাড়া হয় সম্মানজনক পেশায় যাওয়ার স্বপ্ন। পরের বছর ২০২১ সালে পরপর তিনটি ধাপ পেরিয়ে ফের সামান্যর জন্য ওয়েটিং লিস্টের এক নম্বর নাম আসে রাহুলের। সেবারও মন ভাঙেনি। শুরু হয় পরেরবারের জন্য প্রস্তুতি। ২০২২ সালের যে পরীক্ষার রেজাল্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে সব কটা ধাপ পেরিয়ে এবার নিয়োগ তালিকার দ্বাদশতম স্থানে নাম এসেছে রাহুলের। স্বাভাবিকভাবে খুশি রাহুলের পরিবার ও মুর্শিদাবাদবাসী।

জানা গিয়েছে, রাহুল সেখ ২০১০ সালে বারালা রাম দাস সেন হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। সেই স্কুল থেকে ২০১২ সালে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং ভর্তি হন আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসে। বিএএলএলবি কোর্সে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে জুডিশিয়াল পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। ২০২০ সালে আইন নিয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন পঞ্জাবের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে তিনি পিএইচডি করছেন। তবে ২০১৭ সালে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন। অবশ্য তার বাবা হাসিবুল সেখ ছেলে এবং বউমার সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। ছেলেকে বলতেন, তুমি পড়াশোনা করো আমি তোমার পাশে আছি। রাহুলের মা তানজিরা বিবিও ছেলেকে সব সময় পড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করতেন। আর সেই পরিশ্রমের ফসল মিলেছে এবার। 

প্রসঙ্গত, খুব সামান্য রাজমিস্ত্রি হাসিবুল সেখ চার আরও তিন ছেলে ও এক মেয়েকে কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন। রাহুলের একভাই আইটিআই পাশ করে কাজ করছে। অন্যদের মধ্যে একজন মাধ্যমিক, আর একজন উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে এ বছর।

সৌজন্যে- পুবের কলম

Post a Comment

0 Comments