গার্ডেনরিচ, পুকুর চুরি ও বেআইনি বাড়ির রমরমা: তথ্য যেখানে চাঞ্চল্যকর

আসিফ রেজা আনসারী

শহর কলকাতায় একাধিক জায়গার নামে পুকুর লেখা আজও দেখা যায়। যেমন নোনাপুকুর, ফারিয়াপুকুর, পদ্মপুকুর.......। অথচ সেই এলাকায় গেলে দেখা মেলেনা পুকুরের।রাস্তায় দু'একটা কুকুর দেখা গেলেও পুকুর মেলে না। হ্যাঁ, প্রতিদিনই কলকাতায় পুকুর চুরি হয়।তাতে হাত থাকে স্থানীয় নেতা–মাথাদের।রবিবার মধ্যরাতে যখন দক্ষিণ কলকাতা গার্ডেনরিচের বহুতল ভেঙে পড়ে, তারপর নানান প্রশ্ন উঠছে।

শুধু তাই নয়, উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের যে জমিতে রবিবার রাতে বহুতল ভেঙে পড়েছে তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভূমি দফতরের রেকর্ডে গার্ডেনরিচ মৌজার প্লট নম্বর ২০৩ এবং ২০৬ পুরোটাই পুকুর এবং পুকুর পাড়। প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি হওয়া পুকুর তথা জলাশয় ভরাট করে বাড়ি তৈরি করার কোনও নিয়মই নেই। আইনত এটা অবৈধ। কিন্তু রেকর্ডে থাকা সেই পুকুর ভরাট করে পুরসভা কীভাবে বাড়ি তৈরির অনুমতি দিল, তা নিয়ে এবার বড় প্রশ্ন ।

ঘটনাস্থলে সেলিম-সহ বামনেতৃত্ব। নিজস্ব ছবি

ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে খবর, বিতর্কিত যে জমিতে ওই বহুতল গড়ে উঠেছিল তার আয়তন ২০ শতক। রেকর্ডে দেখানো রয়েছে যে সেখানে পুকুর রয়েছে। তা ছাড়া পুকুর পাড়ে কিছুটা জমি রয়েছে। ১৯৫৬ সালের রেকর্ড অনুযায়ী ওই জমির মালিক ছিলেন রাধেলাল আগরওয়াল। আবার বর্তমানে পুরসভার রেকর্ডে মালিকের নাম আনন্দ প্রসাদ চৌধুরী। 

এই জমিতে জি প্লাস টু বাড়ি বানানোর অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা পুরনিগম। অর্থাৎ গ্রাউন্ড ফ্লোর ও তার উপর আরও দুটি ফ্লোর থাকার কথা। কিন্তু  প্রশ্ন হল, কলকাতা পুরনিগম পুকুরের উপর জি প্লাস টু-র অনুমতিই বা দিল কেমন করে? দ্বিতীয় কথা হল, পুরসভা জমির চরিত্র বদল করতেই পারে। কিন্তু তা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরকে না জানিয়ে কেন তার চরিত্র বদল হবে? 

জানা গিয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন পুরনিগমের একটি অ্যাপ তৈরি করিয়েছিলেন। তাতে কোথায় কোথায় জলাশয়, জলা জমি ও পুকুর রয়েছে তা রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায়। নবান্নের ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্তারা প্রশ্ন তুলছেন, রেকর্ডে পুকুর দেখানো থাকা সত্ত্বেও বাড়ি বানানোর অনুমতি দিলেন কে? তাঁকে এবার জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, এই চুরি একেবারে পুকুর চুরি!

এখানেই শেষ নয়, গার্ডেনরিচের বিতর্কিত জায়গায় পুরনিগম জি প্লাস টু-র অনুমতি দিলেও সেখানে জি প্লাস ফাইভ কাঠামো তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ সোজা ৬তলা। সোমবার সকালে এ ব্যাপারে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, বাম জমানা থেকে বেআইনি নির্মাণের শুরু। তখন প্ল্যান অনুমোদন করাতে গেলে জুতোর তলা ক্ষয়ে যেত। তাই অনেকেই বেআইনি নির্মাণ করতে শুরু করে। বর্তমান জমানায় নিয়ম অনেক সহজ করা হয়েছে। যদি বাম আমলেই এটা শুরু হয় তাহলে মা–মাটি–মানুষের দল কি করছে!

Post a Comment

0 Comments