সিএএ: নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপির মহাফাঁদ

আসিফ রেজা আনসারী


দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সংবিধান রচিত হওয়ার সময় নাগরিক কারা হবেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ধারা যোগ হয়েছে সংবিধানে। সংবিধানের ৫ থেকে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে এ নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর অবশ্য নানান সময়ে আইন এসেছে। নাগরিকত্বের বিষয়টি প্রথম দিকে উন্মুক্ত ছিল। ভারতবর্ষ মানবিক দিক থেকে ধর্ম,জাতি বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে উদার মনোভাব গ্রহণ করেছে। ধীরে ধীরে সেই জায়গাটা সংকুচিত হতে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে নাগরিকত্বের সংশোধিত আইন পাস হয় পার্লামেন্টে। আর এই সময় সবথেকে জটিল কতগুলো বিষয় সংবিধানের এই আইনে সংযুক্ত হয়। এই বিজেপি সরকার যতই প্রচার করুক না কেন নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সিএএ আসলে নাগরিকত্ব দেওয়ার এই আইন , কোথাও গিয়ে মানুষকে বেনাগরিক করে দেওয়ার রাস্তা তৈরি করছে সিএএ।

বিজেপি সরকারের যুক্তি, পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ধর্মীয় কারণে উৎপীড়ণের শিকার। তারা ভারতবর্ষে আসতে বাধ্য হচ্ছেন । আর তাই সেই সব মানুষগুলোকে নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে 'সম্মানের সঙ্গে বাঁচার' অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু এটা কি এতটাই সহজ ?

প্রতীকী ছবি 

পার্লামেন্টে আইন পাশ হওয়ার পর সম্প্রতি সিএএ সংক্রান্ত রুল জারি করেছে সরকার । এই রুল জারির মাধ্যমেই আইন কার্যকরী করা হল। সরকার নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে কারা কারা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। প্রথমত সরকারের দ্বারা হয় জানানো হয়েছে মুসলিম ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন শিখ, হিন্দু ,পার্সি বা অন্যান্য যারা রয়েছেন তারা ভারতবর্ষের নাগরিক হতে পারবেন। যদি তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে আসেন। তার জন্য অবশ্য এদেশে অন্যতম পাঁচ বছর থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, দিতে হবে বেশ কিছু নথি। আর এখানেই যত গন্ডগোল। কেননা, কোনও ব্যক্তি যখন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন তখনই তিনি তখনই তিনি নিজে থেকে ঘোষণা দিয়ে দেবেন যে ভারতবর্ষের নাগরিক নন। অর্থাৎ তার কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা অন্যান্য কাগজ থাকলেও তিনি যে বেনাগরিক সেটা চিহ্নিত হয়ে যাবে । আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে পারেন।

অন্য একটি দিক হল– কেউ আবেদন করলেই যে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন তা কিন্তু নয়। কারও আবেদন করার পর তাকে কয়েকটি ধাপে তা পরীক্ষা করা হবে। সেই পরীক্ষায় ফেল করলে তার নাগরিকত্ব চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে একজন ব্যক্তি আবেদন করার সময় সম্পূর্ণ নথি জোগাড় করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে যেমন সন্দেহে রয়েছে, তেমনি একটা বড়সংখ্যক মানুষ যে নাগরিক নয় তাও চিহ্নিত হয়ে যাবে । কিন্তু যারা এ দেশে বড় হয়েছেন তারা কেন বেনাগরিক হবে? এই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায় । ফলে এ আইনের জটিলতায় মানুষের আরও বিপদ বাড়ল। সরকার যদি নাগরিকত্ব দিতে চায় তাহলে নিঃশর্তভাবে সমস্ত বসবাসকারী বাসিন্দাকেই নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করুক। তা না করে ভোটের আগে ললিপপ দেখানো হল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

Post a Comment

0 Comments