ভাষায় সাম্প্রদায়িকতা খুঁজেও একুশের মঞ্চে 'দাওয়াত' পেলেন শুভাপ্রসন্ন!

আসিফ রেজা আনসারী

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক-সালাম-বরকতরা। পরবর্তীকালে ১৯৫২-র এই আন্দোলন বৃহত্তর আকার ধারণ করে। একসময় পূর্ব-পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। ভাষার এই মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামকে স্মরণীয় রাখতে রাষ্ট্রসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে এই দিনটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে। এযাবৎকালে বাংলা ভাষায় শব্দ ব্যবহার এবং ভিন্ন ভাষার শব্দের অনুপ্রবেশ নিয়ে তেমন কোনও বিতর্ক হয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালে রীতিমতো বক্তব্যের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ রাখেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। 'পানি,' দাওয়াত, এ জাতীয় শব্দ নিয়ে তিনি আপত্তি তোলেন। অবশ্য মঞ্চে থাকা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্য খারিজ করেন। শুধু তাই নয়, বিরোধিতা করেন কবি সুবোধ সরকার, বিশিষ্ট পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। তারপর গঙ্গা দিয়ে গড়িয়েছে বহুত পানি। তাঁর মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্যের পরেও এবার দেখা গেল, ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তাহলে কি গতবছরের জের পড়ল না? উঠছে প্রশ্ন। 

গতবছর দেশপ্রিয় পার্কে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং কলকাতা পুরনিগমের ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে।’’ তিনি এখানেই থেমে থাকেননি, সটান বলেন, ‘‘যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ এখন বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও দাওয়াত দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা।’’এই নিয়েই বিতর্ক হয়। 

শুভাপ্রসন্নর বক্তব্য খারিজ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শব্দকে এইভাবে সম্প্রদায় দিয়ে বেঁধে রাখা যায় কিনা, প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর যুক্তি, মাকে কেউ মা বলেন কেউ বা মাদার, পানিকে কেউ ওয়াটার বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘শুভা’দা অনেক শ্রদ্ধেয়। কিন্তু শুভা’দাকে একটা কথা বলব। দেখুন, কতগুলি শব্দ রয়েছে, যেগুলি সারা বিশ্বের। যেমন ‘মা’ বললে সবাই জানে দু’টি শব্দ রয়েছে। একটা ‘মা’ আর একটা ‘মাদার’। আর একটা শব্দ রয়েছে ‘জল’ বা ‘ওয়াটার’। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ ‘পানি’ বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ ‘আম্মা’ বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে। কেউ বারণ করেনি। আমি মা-ও বলব, আমি আম্মাও বলব।’’ 

শুভাপ্রসন্নর এই মন্তব্য ঘিরে যখন রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যে নানান তর্ক-বিতর্ক চলছে, তখন ফের নিজের স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই বুদ্ধিজীবী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো রাজনীতি করি না। আমি নির্বাচনেও লড়ব না। আমি ছবি আঁকি। তাই কোনও সম্প্রদায় বা শ্রেণিকে খুশি করার তাগিদ আমার নেই। আমি যেটাকে যথার্থ মনে করি, সেটাই বলেছি।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, বাংলা ভাষায় দিন দিন ‘সাম্প্রদায়িকতার ছায়া’ পড়ছে। 

আজকের অনুষ্ঠানে থাকছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ দীপক অধিকারী, সুব্রত বক্সি, মালা রায়, নাদিমুল হক, সামিরুল ইসলাম, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, বিধায়ক দেবাশীষ কুমারের পাশাপাশি থাকবেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী, কবি শ্রীজাত, লেখক আবুল বাশার, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, মমতা শঙ্কর, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ হাসান ইমরান, বচন সিং সরল প্রমুখ। 

Post a Comment

0 Comments