বাংলার নৃতত্ব, হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক তুলনা: সৈয়দ মুজতবা আলীর 'এক পুরুষ'

নিজস্ব প্রতিবেদন: লকডাউনের সময় সামনাসামনি আলোচনা করা মুশকিল। তাতে না দমে অনলাইনেই জমে উঠেছে পাঠচক্র। আগের বারের প্রবন্ধগ্রন্থ পাঠ সারা করে এবারের বিষয় ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর "এক পুরুষ"।

জানুয়ারীর প্রথম তিন রবিবার ধরে এই রচনা পাঠ হয়েছিল। শেষ রবিবারে হল বিস্তারিত আলোচনা। জান্নাতুল ফিরদৌসের পরিচালনায় মূল আলোচক ছিলেন গবেষক আসিফ আক্রাম। একপুরুষকে পাঠের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ ও সারাংশ আলোচনা করেন আবু সঈদ আহমেদ। আধিকারিক নইমুর রহমান তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বীরভূমের যে পটভূমি এই রচনার উপজীব্য সেই বীরভূমের সুফিসাধনার সাথে সিপাহি বিদ্রোহের লোকায়ত ইতিহাস। সাথে এই রচনার সার্থকতা বিচার করেন অধ্যাপক আপতার হোসেন।
উদ্যোক্তাদের মতে তাঁদের এই উদ্যোগ নিজেদের জাতিস্বত্বাকে চিনে নেওয়ার জন্য। সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা ভাষায় বৈচিত্র্যময় রচনাশৈলীর জন্য জনপ্রিয় হলেও তাঁর লেখায় বারবার এসেছে দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ।


এই লেখায় তাঁর প্রেক্ষাপট ছিল সিপাহি বিদ্রোহের এক নেতার বীরভূমের ডোমপ্রধান একগ্রামে আশ্রয় নেওয়া। এর মধ্যে তিনি তুলে ধরেছেন ক্ষয়িষ্ণু মুঘল সাম্রাজ্য ও সেই সময়ের সামাজিক আখ্যান, ততকালীন বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলার নৃতত্ব ও ভূপ্রকৃতি, হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক তুলনা। ইবনে খালদুন থেকে গ্রামের মোড়লতন্ত্রের রাজনীতি তিনি যেমন ছুঁয়ে গেছেন তেমনি খুব সাবলীলভাবে ফিরদৌসী বা দেওয়ানী খাসের চোস্ত ফার্সি মিলে গেছে শুদ্রকের সংস্কৃত কাব্যালঙ্কারে। তার পাশে জায়গা করে নিয়েছে পল্লীবাংলার মুর্শিদীগান। আর নারী-পুরুষের অনাদি দ্বন্দ্বমধুরতাও বাদ পড়েনি। সব মিলিয়ে বাঙালির জাতিস্বত্তার লালনের জন্য যে যে উপাদান প্রয়োজন তার সবকিছুকেই খুব দক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
উদ্যোক্তারা আরও জানিয়েছেন তাঁরা একপুরুষ রচনা পাঠকালে যেভাবে একাধারে ছাত্র, শিক্ষক, আধিকারিক, গবেষক, চিকিৎসক সমাজকে পাশে পেয়েছেন তাতে তাঁরা আপ্লুত। তাঁরা আশা রাখেন যে আরও বেশি করে মানুষ সৈয়দ মুজতবা আলী চর্চায় মেতে উঠবেন। সাথে "একপুরুষ" উপন্যাসের মতো বাংলা সাহিত্যের স্বল্পচর্চিত রচনাগুলোতেও আগ্রহী হবেন।

Post a Comment

0 Comments